সম্পাদকীয়

  ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

মনোনয়ন প্রশ্নে কঠোর অবস্থানে আ.লীগ

রামায়ন থেকে মেঘনাদবধ। এখানে বিভীষণ একটি চরিত্র। রাবণ ভ্রাতা এই বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতায় শ্রীলঙ্কার রাজাধিরাজ রাবণের পতন। রামের জয়ডঙ্কা। আবার মীরজাফর আলীর বিশ্বাসঘাতকতায় সিরাজের পতন। সবই যেন একই সুতোয় গাঁথা। এরা সবাই একই সংসারে বেড়ে ওঠা মানুষ। পরস্পরের পরম আত্মীয়ও বটে। এখানে কারো কিছু করার নেই। যেখানে বিশ্বাস আছে সেখানে ঘাতকও থাকবে। বিশ্বাসের সঙ্গে ঘাতকেরও সম্পর্কটা অনেকাংশে আত্মীয়েরই মতো। এ যেন মুদ্রার এপিঠওপিঠ। একে অপরকে ছেড়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। তবে যারা এই সম্পর্ককে সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে শিখেছে, তারাই তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় সমর্থ হয়েছে। অন্যথায় রাবণ অথবা সিরাজের মতো জীবন বিসর্জন দিয়ে পরাধীনতাকে আলিঙ্গন করতে হয়। যে আলিঙ্গনে নেই কোনো সুখ, নেই আনন্দ।

বিদ্রোহ বাংলা পরিভাষার একটি শব্দ। যে শব্দের এপিঠওপিঠ দুটোই আছে। একটা নেতি অপরটি ইতি। মানুষ যখন তার অধিকার আদায়ের জন্য বিদ্রোহ করে তখন তা ইতিবাচক। আবার যখন ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থের জন্য বিদ্রোহ করে তখন তাকে আমরা নেতিবাচক হিসেবে আখ্যায়িত করি। এ ক্ষেত্রে বিশ্বাসঘাতকতার সঙ্গে নেতি-বিদ্রোহের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। যেন আপন সহোদর। সুযোগ পেলে এই সহোদররাই বিভীষণ হয়ে ওঠে। আর সে কারণেই এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মনোনয়নের পর যারা বিদ্রোহ করবেন তাদের আর কখনোই মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ। এটি দলের সিদ্ধান্ত। বিদ্রোহী ব্যক্তি দলীয় পদে থাকলেও তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন কঠোর সিদ্ধান্তে যাচ্ছে দলটি।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয় এর আগে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের প্রশ্রয়দাতাদের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষমা করা হয়েছে। যার কারণে পরে লাগাম টেনে রাখা সম্ভব হয়নি। এবার আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে কঠিন থেকে কঠিনতর অবস্থানে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। এবারের কঠোরতা অতীতের সব রেকর্ড ভাঙবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে অনেকের মতে, আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় একটি রাজনৈতিক দল। এখানে আদর্শিক দ্বন্দ্ব না থাকলেও ব্যক্তি স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রবল। এই দ্বন্দ্বের ফলে ব্যক্তি বিশেষের ক্ষতি কতটা, সে প্রশ্নে অন্য কারো মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। তবে দলের মাথাব্যথা হবেই। ক্ষতি যা হওয়ার দলেরই হয়ে থাকে। আর এ ধরনের বিদ্রোহ যদি দানা বাঁধতে থাকে তাহলে এক দিন তা মিশ্রির দানায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই সব নেতিবাচক সম্ভাবনাকে আওয়ামী লীগ মাথা তোলার আগেই বিষ দাঁত ভেঙে দিতেই আগ্রহী। আর সে কারণেই কঠোর থেকে কঠোরতর অবস্থান।

তরিকাটি কোনো একক দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। রাজনীতির সব স্তরে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে তা সমানভাবে প্রযোজ্য এবং এটিই রাজনীতি। পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত একই চিত্র। আমরা মনে করি, বিষয় যখন রাজনীতি তখন কম-বেশি এই কর্মকান্ড থাকবে। মানিয়ে নিতে হয়। বিশেষ করে বিষয়টি যখন রাজনীতির জীবনের অংশ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মনোনয়ন,সম্পাদকীয়,আওয়ামী লীগ,রাজনীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close