সম্পাদকীয়

  ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আপত্তিকর লিংক-সাইট বন্ধ করা সময়ের দাবি

আপত্তিকর লিংক-সাইট বন্ধ করা হয়েছে, সংবাদটি শুভ। বাংলাদেশের মাটিতে এ দাবি বহু দিন ধরেই উত্থাপিত হয়ে আসছে। কিন্তু এত দিন সে ব্যাপারে কোনো সাড়া শব্দ মেলেনি। দেরিতে হলেও শুরু হওয়ায় দেশবাসী বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে বন্ধের প্রক্রিয়া কত দূর পর্যন্ত তাদের হাত প্রলম্বিত করবে—সেটাই দেখার বিষয়।

আপাতত যেটুকু জানা গেছে, তাতে গত এক বছরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ আপত্তিকর পাঁচ হাজারের বেশি লিংক বা সাইট বন্ধ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর মধ্যে ফেসবুক লিংক ৪ হাজার ৮৮৮টি, ইউটিউবের ৬২, ওয়েবসাইট লিংক ১ হাজার ৬০টি এবং ২২ হাজার পর্নোগ্রফি ও জুয়ার সাইট রয়েছে।

তথ্য মতে, গত এক বছরে আপত্তিকর ১৮ হাজার ৮৩৬টি ফেসবুক লিংক ৪৩১টি ইউটিউব লিংক ও ১ হাজার ৬০টি ওয়েবসাইট লিংক বন্ধে সংশ্লিষ্ট মাধ্যমের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়। এই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লিখিত ফল আসে। টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্সের মাধ্যমে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ২২ হাজারের বেশি পর্নোগ্রাফি ও অনলাইন জুয়ার সাইটে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। তবে আরো আগে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে দেশের যুব সমাজের যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে তার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেত বলেই আমাদের বিশ্বাস।

এ দিকে সাম্প্রতিক সময়ে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নামে অবমাননাকর পোস্ট ও আপত্তিকর কনটেন্ট অপসারণে বিটিআরসি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করে তাদের সহায়তায় ৫টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও একটি অ্যাকাউন্ট থেকে আপত্তিকর পোস্ট অপসারণ করা হয়েছে। এত গেল ফেসবুক আর ইউটিউব সম্পর্কিত ইতিবাচক উদ্যোগ। কিন্তু আকাশ মিডিয়ার দৌরাত্ম্য ঠেকানোর ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে—এমন উপমা খুঁজে পাওয়া ভার। আমরা মনে করি আকাশ মিডিয়ার দিকেও নজর দেওয়ার সময় এসেছে।

দেশে সংসার ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে। আর এই সংসার ভাঙার পেছনে আকাশ মিডিয়ার ভূমিকা অনেকাংশে দায়ী। বিশেষ করে ভারতীয় চ্যানেলের সিরিয়াল গোটা সমাজকে যে ভাঙনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। জাতীয় চরিত্র গঠনে টিভি মিডিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। আজকাল আকাশ মিডিয়ায় সংস্কৃতির ইতিবাচক কিছু খুঁজে পেতে কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্বও কম নয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য দেশে টিভি মিডিয়ার সংখ্যা বেড়েছে। বাড়েনি অনুষ্ঠানের মান। তাই বাইরের আকাশ মিডিয়ার প্রতি আমাদের আকর্ষণও বাড়ছে। একসময় আমাদের নাটক বাইরের বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে অনেকটা নেশার মতো গ্রহণীয় ছিল। এখন তার কানাকড়িও খুঁজে পাওয়া যায় না।

কারো কারো মতে, এর জন্য আমাদের দর্শক-শ্রোতাই দায়ী। অভিযোগ কোনোভাবেই সত্যের কাছাকাছিও নয়। কেননা ক্রেতাপক্ষ সবসময়ই পণ্য দেখে-শুনে ভালোটাই কেনার চেষ্টা করবে। এটাই স্বাভাবিক। আর মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উৎপাদনকারী মালিকপক্ষকে এ দিকে খেয়াল রাখাটা খুবই জরুরি। এছাড়া জাতি ও রাষ্ট্রের কোনো ধরনের ক্ষতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সবারই দায়িত্ব। সর্বাগ্রে সরকারের। সরকার শুরু করেছে। আগামীতে তা আরো বিকশিত হবে এটুকুই প্রত্যাশা। তবে প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়ে কারো ওপর অপ্রত্যাশিত কিছু করা না হয় সে দিকে দৃষ্টি রাখাও রাষ্ট্রের ওপরেই বর্তায়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আপত্তিকর লিংক,সম্পাদকীয়,মুক্তমত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close