সম্পাদকীয়
চাই কঠোর নজরদারি ও আইনানুগ ব্যবস্থা
‘দালাল’ একটি বিশেষ্য পদ। বাংলা একাডেমির আধুনিক বাংলা অভিধানে শব্দটির ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে—প্রথমত, পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বা ক্রয়-বিক্রয়ে মধ্যস্থতা করা যার পেশা। দ্বিতীয়ত, যে ব্যক্তি স্বার্থোদ্ধারের আশায় বিশেষ কোনো পক্ষ অবলম্বন করে। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, এই বিশেষ শ্রেণিটির অসাধু কার্যক্রমের হেন কোনো ব্যাখ্যা অথবা উপমার প্রয়োজন নেই, যা দিয়ে তাদের চিহ্নিত করা যায় না। দেশের এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে তাদের গতিবিধি পরিমিত কিংবা নিয়ন্ত্রিত। বরং বলা যায়, তাদের দোর্দণ্ড প্রতাপের কাছে সবাই যেন হার মানতে বাধ্য। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহন, পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএসহ এমন কোনো সেবা খাত বাদ পড়েনি যেখানে তাদের বিস্তার নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সেক্টরে দালালচক্রের সক্রিয়তা এবং আধিপত্য এমন আকার ধারণ করেছে যা নিয়ে মানুষ অতিষ্ঠ। টাকা ছাড়া তারা কিছুই বুঝে না। এমনকি সরকারি অনেক কর্মকর্তাও তাদের সামনে অসহায় বোধ করেন। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পেতে হলে শুধু নিয়ম মাফিক নির্ধারিত অঙ্কের টাকা ব্যয় করলেই কাজ হয় না। সন্তুষ্ট করতে হয় দালালদের। হতদরিদ্র স্বল্পআয়ের মানুষ চিকিৎসা নিতে গিয়ে দুর্গতি ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ বাস্তবতা শুধু হাসপাতালেই নয়, প্রায় সর্বত্র বিরাজমান। এ নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে ওঠে এসেছে দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়া সাধারণ মানুষের দৈন্যদশার গল্প।
আশার কথা, গত রবিবার সারা দেশে একযোগে দালালবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অভিযানের মূল উদ্দেশে সেবা খাতে দালালদের দৌরাত্ম্য দমন করা। সাধারণ মানুষের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা। এর অংশ হিসেবে দেশজুড়ে দালালদের আটক করা হয়। পাসপোর্ট অধিদপ্তর, ভূমি অফিস, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ও সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব ও বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের ৪৯৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল-জরিমানা করা হয়।
র্যাবের এই উদ্যোগের সাফল্য কামনার পাশাপাশি আমরা এ অভিযানের ধারাবাহিকতাও প্রত্যাশা করছি। কারণ দীর্ঘদিন ধরে দালালচক্র যেভাবে প্রতারণার জাল বিস্তার করে মানুষকে ফাঁদে ফেলছে। কুঠারাঘাত করছে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষায় তা খুবই দুঃখজনক। এই অভিযানের কারণে সামান্য হলেও মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে।
বলা সঙ্গত, সারা বছর দালালবিরোধী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে র্যাব। তবে বিচ্ছিন্নভাবে চালানো অভিযানের কারণে দালালদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছিল না। এ কারণে একই সময়ে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এতে অভিযানের পক্ষে র্যাবের যুক্তি হচ্ছে, এক দিনে হঠাৎ করে দেশজুড়ে অভিযান শুরু করলে পালানোর সুযোগ কম পাবে দালালরা। এতে এ চক্রের একটি বড় অংশকে সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলে মনে করেন তারা। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই একসঙ্গে একই সময়ে অভিযানে নামে র্যাব।
আমরা চাই, এই অভিযান যেন থেমে না যায়। তাহলে দালালরা গা ঢাকা দেওয়া এবং পালানোর সুযোগ পাবে। এই অশুভচক্রের জিম্মিদশা থেকে মানুষের মুক্তির জন্য প্রয়োজন কঠোর নজরদারি। এর সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা। আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
পিডিএসও/হেলাল