সম্পাদকীয়
কর্মহীন মানুষের দেখভালে এগিয়ে আসাটা জরুরি
বাড়ছে সংক্রমণ। কমছে না মৃত্যু। করোনা মহামারির এই তাণ্ডব কবে শেষ হবে তাও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। দিন যাচ্ছে। বাড়ছে অভাব। ঘরে ঘরে কর্মহীন মানুষের উৎকণ্ঠা। আগামীকাল উনুন জ্বলবে তো! এক নিঃশব্দ হাহাকারের মধ্য দিয়ে চলছে বিশ্ব। আমরাও এর বাইরে থাকতে পারিনি। সম্ভবও নয়। মহামারি আক্রান্ত এই বিশ্বের আমরাও একটি অংশ। উৎপাদন বন্ধ, স্থবির বিপণন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। তবুও বাঁচতে হবে। বেঁচে থাকার জন্য যে যার মতো চেষ্টায় লিপ্ত। তবে এই মহামারিতে বিত্তবানদের মাথাব্যথা কম। বেঁচে থাকার জন্য তাদের কোনো উৎকণ্ঠা নেই। উৎকণ্ঠা হতদরিদ্র, কর্মহীন সাধারণ মানুষের। আর সে কারণেই কর্মহীন মানুষের দেখভালে সরকার এবং বিত্তবানদের এগিয়ে আসাটা আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
কাজ না থাকলে টাকা মিলবে না। টাকা না থাকলে পৃথিবী অন্ধকার। অচল সংসার। সেই সঙ্গে বাজারে সবকিছুর দাম যদি হাতের নাগালের বাইরে হয় তখন! আমরা হতদরিদ্র মানুষের পক্ষে বলছি। এদের লক্ষ্য তখন কোথায় কম পয়সায় কিছু পাওয়া যায় সেই দিকে। এ রকম একজন আলম হোসেন। বয়স ৭১। তিনি প্রায় চার কিলোমিটার পথ হেঁটে এসেছেন। এই বয়সে এত দূরের পথ হেঁটে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি। ছায়ায় বসে একটু বিশ্রাম নিতে হয়েছে।
তিনি বললেন, কোনো কোনো দিন তাদের এলাকায় টিসিবির ট্রাক যেত। কিন্তু আজ যায়নি। ট্রাকের সন্ধানে একটু এগিয়ে শাপলা চত্বরে আসেন। সেখানেও না পেয়ে আরো একটু এগিয়ে দৈনিক বাংলা মোড়ে আসেন। সেখানেও এ রকম কিছু না পেয়ে এগিয়ে চলেন সামনের দিকে। আসেন প্রেস ক্লাব চত্বরে। সেখানে এসে দেখা মিলল কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশার।
অপর একজন বইয়ের দোকানের এক কর্মচারী। তিনি বললেন, দোকান বন্ধ। মাঝে মধ্যে খোলা থাকলেও বিক্রি-বাট্টা নেই। কষ্টের সিঁড়ি বেয়ে সময়কে অতিক্রম করতে হচ্ছে। টিসিবির পণ্য প্রায়শই কেনেন তিনি। আজ তিনটি পণ্য কিনে বাজারের চেয়ে ১২০ টাকা কম পড়ল।
বনশ্রীর মেরাদিয়া এলাকায় টিসিবির পণ্য কিনতে এসেছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক। তিনি বলেন, স্ত্রীসহ তিনজনের ছোট্ট সংসার। এটাই চালানো দায় হয়ে পড়ছে। করোনার আগে বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী দোকানে দোকানে পৌঁছে দিতেন। দুজন কর্মচারীও ছিল। এখন সব বন্ধ। আয়-রোজগার নেই। জমানো টাকা দিয়ে সংসার চলছে।
এ দিকে মাদারটেক এলাকায় ট্রাক আসার অনেক আগেই পণ্য কিনতে নারী-পুরুষের লম্বা লাইন। নগরের জলকর এলাকা থেকে দুই কিলোমিটার পথ হেঁটে আসা রোকন মাহমুদ বললেন, কম পয়সায় পাওয়া যায় বলেই এত দূর থেকে এখানে আসা। অপর একজন বর্ষীয়ান বললেন, ছেলেমেয়েরা লাইনে দাঁড়াতে লজ্জা পায় তাই নিজেই এসেছি।
এখানে যারা পণ্য কিনতে এসেছেন, তারা সবাই নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য। অধিকাংশই কর্মহীন। করোনা দীর্ঘায়িত হলে, লকডাউন প্রলম্বিত হলে এদের বেঁচে থাকাটা আরো কঠিন হয়ে পড়বে। সরকার কমবেশি এদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সে রকম কোনো ভূমিকা চোখে পড়ছে না। আমরা আশা করি, সরকার সহযোগিতার হাত আরো প্রসারিত করবে এবং একই সঙ্গে বিত্তবানরাও এ কাজে এগিয়ে আসবেন এটাই প্রত্যাশা।
পিডিএসও/হেলাল