সম্পাদকীয়

  ০৩ আগস্ট, ২০২১

সংকট মোকাবিলায় চাই সমন্বিত পদক্ষেপ

‘হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান।/তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান/কন্টক-মুকুট শোভা।—দিয়াছো, তাপস,/অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার বিখ্যাত ‘দারিদ্র্য’ কবিতায় দারিদ্র্যকে যেভাবে মহান বলে অভিহিত করেছেন, নিঃসন্দেহে তা তার অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস। কিন্তু ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী যখন গদ্যময় হয়ে ওঠে ভুখাণ্ডনাঙ্গা মানুষের কাছে পূর্ণিমার চাঁদকেও তখন ঝলসানো রুটির মতো মনে হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে যে প্রভাব পড়েছে, তা যেন সেই অবস্থাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। এখনই এই সংকট মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে তা আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। কারণ করোনা যে অশনিসংকেত দিচ্ছে, তা নিয়ে সময়ক্ষেপণের কোনো সুযোগ নেই। সার্বিক পরিস্থিতিতে মানুষের কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে। বাড়ছে দারিদ্র্যের সংখ্যা। সময়মতো ও পরিকল্পনামাফিক পদক্ষেপ না নিলে সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হতে পারে।

বলা প্রাসঙ্গিক, করোনার অভিঘাতে দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনমান নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। বস্তুত করোনার কারণে গত বছরের মার্চ থেকেই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। গত সেপ্টেম্বর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও পুরো গতি পাওয়ার আগেই হানা দেয় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। গত বছর ব্যবসাণ্ডবাণিজ্যের যে ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউয়ে ব্যবসাণ্ডবাণিজ্যে ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। এসব কারণে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। আর্থিক চাপ সামাল দিতে গিয়ে অনেকের সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে বহু আগেই। ফলে ধারদেনা করেও পরিস্থিতি সামলে উঠতে না পেরে অনেকে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। আবার গ্রামে গিয়েও অনেকে পড়ছেন নতুন সংকটে। কর্মহীন অবস্থায়ও প্রতিদিন যেভাবে তাদের ব্যয় বেড়ে চলেছে; তাতে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে, তা ভেবে চোখে অন্ধকার দেখছে তারা। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, সেদিকেই তাকিয়ে আছে মানুষ। সম্প্রতি প্রকাশিত ব্র্যাকের এক জরিপে দেখা যায়, ১৪ শতাংশ মানুষের ঘরে খাবার নেই এবং আগের তুলনায় দারিদ্র্যের হার বেড়েছে ৬০ শতাংশ। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নিম্নবিত্তরা সরকারিণ্ডবেসরকারি বিভিন্ন সাহায্যণ্ডসহযোগিতা পেলেও মধ্যবিত্তের বড় একটি অংশ এখন অসহায়। এ অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে তারা আরো বিপদে পড়বে; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের জন্য সরকারের সহায়তা আরো বাড়ানো দরকার। যাতে দারিদ্র্যের হার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যেহেতু এ সংকট কাটিয়ে ওঠার সহজ কোনো উপায় নেই; সেহেতু সংকট মোকাবিলায় সরকারি নানা উদ্যোগের সমন্বিত বাস্তবায়ন এ মুহূর্তে বড়ই প্রয়োজন। এ ছাড়া সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং সহমর্মিতার হাত বাড়াতে হবে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়াতে হবে এবং সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। সীমিত আয়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থনীতির গতি ফেরাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য নিতে হবে বিশেষ পদক্ষেপ। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট সবাইকে হতে হবে দায়িত্বশীল ও সহমর্মী।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সংকট মোকাবিলা,সম্পাদকীয়,মুক্তমত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close