সম্পাদকীয়

  ০২ আগস্ট, ২০২১

লকডাউনে কুল রাখি না মান রাখি

করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ঠেকাতে ১ জুলাই থেকে আরোপ করা এক সপ্তাহের লকডাউন শেষ হতে না হতেই জানানো হলো ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত তা বাড়ানো হয়েছে। এলো ঈদুল আজহা। শিথিল হলো লকডাউন। ২৩ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত সব ধরনের বিধিনিষেধ শিথিল করা হলো। আবারও কঠোরতা। ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট থমকে দাঁড়াল দেশ। আবারও লকডাউনের জাঁতাকলে পিষ্ট হলো সাধারণ মানুষ, যা এখনো টানতে হচ্ছে। এই আছি এই নেই দোলাচলে ভাসতে ভাসতে দেশের বেশির ভাগ মানুষই ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ। তারা বলছেন আমরা বাঁচব কীভাবে। লকডাউন আমাদের বেঁচে থাকার সব পথই রুদ্ধ করেছে। এত গেল লকডাউন নামক মুদ্রার এক পিঠের কাহিনি।

বিপরীত পিঠ বলছে, চলমান লকডাউন আরো ১০ দিন প্রলম্বিত হতে পারে। বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আবার একই দিনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপন বলছে, ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প ও কল-কারখানা চলমান বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত থাকবে। অপর এক তথ্য বিবরণিতে বলা হয়, গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঢাকায় ফেরার জন্য রবিবার পর্যন্ত গণপরিবহন চলবে। এদিকে গার্মেন্টসহ সব শিল্প-কারখানা বন্ধ ঘোষণার পর পুনরায় পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে জনমনে যথেষ্ট বিভ্রান্তির ছায়াপাত হয়েছে। আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিধিনিষেধ জারি করা থাকলেও এরই মধ্যে নানা কারণ ও কৌশলে মানুষ বাইরে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছে। গণপরিবহন ছাড়া রাস্তায় নেমেছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন।

এদিকে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবে উদ্বিগ্ন দেশবাসী। তাই ঘরে ফেরা মানুষের ঢাকা ফেরার প্রবণতা উপচে পড়েছে। ঢল নেমেছে ঢাকামুখী মানুষের। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কেও যানবাহন চলাচল বেড়েছে। যে যেভাবে পারছেন ঢাকায় ঢোকার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়ায় ঢাকা ছাড়ছেন। বিষয়টি সরকারের জন্য শাঁখের করাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে জীবিকার তাগিদে মানুষের এভাবে রাস্তায় নামা পাশাপশি করোনা প্রতিরোধে এবং অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য নেওয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ।

বাস্তবতার নিরিখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে। প্রকৃত অর্থে আমরা এখন এক জটিল অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করছি। এই সময় সরকারের একার পক্ষে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব নয়। সম্পৃক্ত হতে হবে সবাইকে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষকে। তাদের আন্তরিকভাবে প্রতিরোধ যুদ্ধে এগিয়ে আসতে হবে। স্বাস্থ্যবিধিকে মেনেই চলতে হবে অন্তত আরো ছয় সপ্তাহ। তারপর অবস্থা বুঝে নিতে হবে নতুন সিদ্ধান্ত। এর মাঝে পটপরিবর্তন হয়ে ইতিবাচক পথে ফিরে আসতে পারে করোনার গতি-প্রকৃতি। তবে সবটুকুই নির্ভর করবে আমাদের আচরণের ওপর।

মনে রাখতে হবে, করোনা আমাদের একটি শাঁখের করাতের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। লকডাউন করলে অর্থনীতির ওপর সীমাহীন চাপ, না করলে সংক্রমণ থামার সম্ভাবনা ক্ষীণ। আমরা এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে আটকে আছি, যেখানে লকডাইনে কুল রাখি না মান রাখি এটিই ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সঠিক সিদ্ধান্তের অনুগত হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাব এটিই প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
লকডাউন,সম্পাদকীয়,মুক্তমত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close