সম্পাদকীয়

  ০১ আগস্ট, ২০২১

সমাধান দিতে হবে রাজনীতিকদের

সম্প্রতি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ সবার দৃষ্টি কেড়েছে। শিরোনামে বলা হয়, “বড় দু’দলেই ভুঁইফোড়”। রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগে দেড় শতাধিক। বিএনপিতে ৬৭। সংখ্যাগত দিক দিয়ে আওয়ামী লীগে ভুঁইফোড়ের সংখ্যা বেশি। এটাই স্বাভাবিক। কেননা দলটি টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় রয়েছে। আর এসব ভুঁইফোড় সবসময়ই ক্ষমতাসীন দলেই বেশি ভিড় জমায়। বিষয়টিতে কোনো নতুনত্ব নেই। সবসময়ই আমরা এ চিত্র দেখে এসেছি এবং দেখছি। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেছেন, ‘এখনই যদি এদের দল থেকে বের করে দেওয়া না হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব অর্জন এদের কারণেই ম্লান হয়ে যেতে পারে। এরা কেউই আদর্শবাদী নয় সবাই মতলববাজ।’

শত বছরের অভিজ্ঞতাই জন্ম দেয় এক-একটি প্রবাদ। এ রকম একটি প্রবাদ, ‘এক বালতি দুধে এক ফোঁটা গো-চোনাই যথেষ্ট। দুধ ফেটে যাওয়ার জন্য দুই ফোঁটার প্রয়োজন হয় না। ফেটে যাওয়া একটি গ্রামীণ শব্দ যার অর্থ নষ্ট। অর্থাৎ এক বালতি দুধে এক ফোঁটা গো-চোনা ফেললে সে দুধ আর দুধ থাকে না। খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে। ঠিক একইভাবে যেকোনো রাজনৈতিক দলে ভুঁইফোড়দের অনুপ্রবেশ ঘটলে সেই দলে আর রাজনীতি থাকে না। ক্রমে রাজনীতি বিবর্জিত একটি দলে রূপান্তর ঘটে। এসব ভুঁইফোড়ের কোনো রাজনৈতিক দর্শন না থাকার কারণেই এমন অবস্থার জন্ম। এদের অধিকাংশই সবসময় দলবদল করে সরকারি দলে থাকতেই ভালোবাসেন। এদের দর্শন যে নেই তাও নয়। এরা ভোগবাদী দর্শনে বিশ্বাসী। লুটেপুটে খাওয়াই এদের লক্ষ্য।

আমাদের সমাজে এরা আছেন এবং বহাল তবিয়তেই আছেন। তাদের এই থাকাটা এক বালতি দুধের মাঝে এক ফোঁটা গো-চোনা হয়ে থাকার মতো। দলের মধ্যে তাদের এই উপস্থিতি দলের কোনো উপকারে আসে না। বরং বিপরীতটি ঘটে। এদের কর্মকাণ্ড সবসময়ই দলকে দুর্বল করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, রাজনীতির মাঠ এদের পদচারণায় মুখর। ক্ষমতাও অনেক। মাঝে মধ্যে এদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রকাশ করে পত্রপত্রিকা পাঠককুলের চাহিদা মেটায়। এর বেশি কিছু হয়েছে, এমনটা দেখা যায়নি। দেখা না যাওয়ারও বিশেষ কারণ আছে। শোনা যায়, এদের পৃষ্ঠপোষকের সংখ্যাও কম নয়। সমাজে এদের মান, সম্মান, ইজ্জত, ক্ষমতা এবং ওজনও বেশি। ভুঁইফোড়রা পরগাছার মতো এদের জড়িয়েই বেঁচে থাকে। স্বাস্থ্যসমৃদ্ধ হয় এবং বিস্তার লাভ করে। কথা উঠেছে এদের বের করে দিলেই সমাধান। কিন্তু সত্যিই কি তাই!

না, বের করে দিলেই সমাধান নয়। এরা তো নদীর জোয়ারের মতো। নদীর স্বাস্থ্য ভালো হলেই এরা অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। প্রবেশের পেছনে থাকে সাগরের শক্তি। আর রাজনীতিতে এই সাগর হচ্ছে দলের পরিচালন শক্তির শক্তিধর কিছু নেতা। দলের অভ্যন্তরে এদের অবস্থান বহাল রেখে যেকোনো পরিবর্তন বিফলে যাবে। শুধু আওয়ামী লীগই এই রোগে আক্রান্ত তা-ও নয়। বিএনপির অবস্থাও তৎসম। এই মুহূর্তে বিএনপি ক্ষমতায় নেই তাই সেখানে ভ্রমর গুঞ্জন কম। যখন ক্ষমতায় ছিল তখন সেখানেও ভুঁইফোড়দের ক্ষমতার দাপট আমরা দেখেছি। সংখ্যাগত দিক থেকে তারাই তখন এগিয়ে থেকেছে। সুতরাং এক কথায় বলা যায়, ভুঁইফোড় তৈরির কারখানায় তোপ দাগতে না পারলে এদের কখনোই উৎখাত করা সম্ভব নয়। তাই রাজনীতিকদের নতুন করে ভাববার সময় এসেছে। তারা ভাববেন এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এটাই প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সমাধান,রাজনীতি,সম্পাদকীয়,আওয়ামী লীগ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close