শেখ নজরুল ইসলাম

  ২৮ জুলাই, ২০২১

মন্তব্য প্রতিবেদন

পচা ডিম কখনোই বাচ্চা জন্ম দিতে পারে না

করোনার প্রভাব পড়েনি বিশ্বে এমন স্থান খুঁজে পাওয়া ভার। আমরাও ব্যতিক্রম হতে পারিনি। দেশের প্রতিটি জায়গায় বা ঘরে করোনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব কমবেশি সব জায়গায় লেগেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে রাষ্ট্র, সরকার, শিক্ষক সমাজ, অভিভাবক সমভাবে চিন্তিত। অনেকেই বলছেন, রসাতলে যেতে বসেছে শিশুদের ভবিষ্যৎ। ঘরে বসে থাকতে থাকতে অনেকের মানসিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ছে। বিপৎগামী হওয়ার উপক্রম অনেকেই, বিশেষ করে উঠতি শিশু-কিশোরদের চলমান জীবন।

অবস্থা যখন ঠিক এমন, তখন দেশের জাতীয় দৈনিকের শিরোনামে স্থান পেয়েছে ‘জুয়ার আসরে ৩ শিক্ষক’। বিষয়টি যেমন আতঙ্কের, ততখানি ভয়ংকর। আলমডাঙ্গা থানার দুই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এক সহকারী শিক্ষককে আটক করে পুলিশ। তাদের আলমডাঙ্গা থানায় নিয়ে আসা হয়। পুলিশ তাদের ইজ্জতের দিকে তাকিয়ে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। পুলিশ বলছে, তারা সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি এবং বিভিন্ন মহলের অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষকরা সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি- এ বিষয়ে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। কিন্তু করোনাকালে যেসব শিক্ষক তাদের ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে এবং কোনো ধরনের প্রচেষ্টা না চালিয়ে জুয়ার আসরে বসবেন- তারা কী করে সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি হতে পারেন! প্রধান শিক্ষকইবা কী করে সহকারী শিক্ষককে নিয়ে জুয়ার আসরে বসতে পারেন। তাহলে তার প্রশাসন কীভাবে চলে, তা সহজেই অনুমেয়।

দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি আজ সমাজের সর্বত্রই বিরাজমান। তবে শিক্ষক সমাজ এসব থেকে অনেকটাই দূরে থাকবে- এটাই প্রত্যাশা। দেশের মানুষ সেভাবেই ভাবে। অনেকেই বলেছেন, মাত্র তিনজন শিক্ষকের এমন কাজে কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, ত্যাগী শিক্ষকদের জন্য আজ সমাজে অনেকেই মাথা উঁচু করে অবদান রাখতে পারছেন। এমন শিক্ষক না থাকলে আজ হয়তো আলোকিত জীবন সম্ভব ছিল না। কুষ্টিয়ার চুয়াডাঙ্গার তিন শিক্ষকের এই কীর্তি মুখরোচক আলোচনার জন্ম দেবে। যেমন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ফোনালাপ শিক্ষক সমাজ সম্পর্ককে একটু হলেও নাড়া দিয়েছে।

শিক্ষকরাই জাতির ভবিষ্যৎ তৈরির কারিগর। তাদের দিকনির্দেশনায় গড়ে উঠে সুন্দর মানুষ। শিশুরা কাদামাটির মতো, সেই কাদামাটিকে কীর্তিমান করে তোলেন শিক্ষকরা। অথচ তারা যদি এই করোনাকালকে আমলে না নিয়ে জুয়ার আসরে বসেন; তাহলে ছাত্রছাত্রীরা কী করবে। এই শিক্ষকরাই তো আবার স্কুলে ক্লাস নেবেন। নীতিবাক্য শোনাবেন। শাসন করবেন।

চারপাশে বড় খারাপ সময় বইছে। যারা কখনোই স্কুলের চৌকাঠে পা রাখেনি, তাদের কথা আলাদা। তবে শিক্ষা নেওয়া অনেক মানুষকে আমরা দেখতে পাই, যাদের কোনো ধরনের মানবিক দায়িত্ববোধ নেই। এরা ইতিবাচক সমাজ গঠনের জন্য কতটা ভয়ংকর, তা আর নতুন করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। পচা ডিম থেকে কখনোই বাচ্চা ফোটানো সম্ভব নয়, সেখানে যতই তাপ সৃষ্টি করা হোক না কেন।

স্কুলে গেলেই শিক্ষিত হওয়া যায় না। শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে যাদের ভূমিকা আছে তার মধ্যে অন্যতম হলেন শিক্ষক। আমাদের সেই মানের শিক্ষক গড়ে তোলার জন্য কাজ করা দরকার। এটাও ঠিক যে, আমরা অনেক ক্ষেত্রে একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার জন্য অনেক কিছু দিতে পারিনি। তার পরও অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে শিক্ষকদের মানোন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। তাই আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে জীবনমান উন্নয়নে। সচেষ্ট থাকতে হবে সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতে। আর একই সঙ্গে এ ধরনের নামধারী শিক্ষকদের ব্যাপারে হতে হবে সতর্ক।

লেখক : সম্পাদক, প্রতিদিনের সংবাদ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মন্তব্য প্রতিবেদন,সম্পাদক,প্রতিদিনের সংবাদ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close