সম্পাদকীয়

  ২৮ জুলাই, ২০২১

চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী

সবকিছু ছেড়ে আমাদের এখন প্রচলিত প্রবচনের দিকে ফিরে যাওয়ার সময় এসেছে। কেননা আমাদের সামাজিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে এসব প্রবচনের সাযুজ্য চোখে পড়ার মতো। দেশে কঠোর লকডাউন শেষে ঈদুল আজহার কারণে তোলা হলো কঠোরতা। চালু হলো যানচলাচল। যাত্রাপথে মানুষের চাপ থাকলেও সড়কে কোনো চাপ থাকার কথা নয়। কিছু কিছু এলাকায় জট থাকলেও সড়ক ছিল অনেকটা ফাঁকা। তার পরও দুর্ঘটনা ঠেকানো যায়নি। লকডাউন তুলে নেওয়ার পর থেকে আবার লকডাউন চালুর মধ্যবর্তী ১১ দিনে সড়কে প্রাণহানি হয়েছে ২০৭ জনের। কিন্তু কেন! এ প্রশ্নের কোনো জবাব নেই।প্রবচনে বলা হয়েছে, ‘চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী’। আরো একটি প্রবচন বলছে, পৃথিবীর অনেক কিছুই সোজা করা গেলেও ‘কুকুরের লেজ কখনো সোজা হওয়ার নয়’। প্রবচন দুটিই যেন সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। তুলনা করা যেতে পারে যানবাহনের চালকদের সঙ্গে। এই ১১ দিনে সড়কে মোট ১৫৮টি দুর্ঘটনা হয়েছে। এতে ২০৭ জনের প্রাণহানি ছাড়াও আহত হয়েছেন ৩৮৯ জন। আর ঈদুল আজহার আগে ও পরে ১৪ দিনে ১৮৭টি দুর্ঘটনায় ২২৯ জন নিহত হয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে সড়ক পরিবহন খাতের অব্যবস্থাপনার কারণে।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে এ যাবৎ অনেক আলোচনা, পর্যালোচনা এবং সমালোচনা হয়েছে। কোনোকিছুতেই কোনো সুফল আসেনি। না আসার পেছনে সম্ভবত প্রবচনের একটা হাত আছে। প্রবচন তার সত্যতা প্রমাণের জন্য এসব ঘটনার কাছে ঋণী। এ রকম ঘটনাই প্রবচনকে বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রবচন তার সত্যতা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা একগুচ্ছ কারণ উল্লেখ করে বলেছেন, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতাই দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। আর সবকিছুর ঊর্ধ্বে যে কারণটি রয়ে গেছে তা হলো, ‘জবাবদিহি না থাকা’। এ ছাড়া রয়েছে, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, ট্রাফিক আইন না জানা বা না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহনে চাঁদাবাজি।কারণ যাই হোক, কুকুরের লেজ সোজা করার মতো যন্ত্র আমাদের হাতে নেই, এ কথা যেমন সত্য সমানভাবে এ কথাও সত্য যে, সোজা করার মতো সদিচ্ছাও আমাদের নেই। সদিচ্ছা থাকলে তার কিছু নমুনার সঙ্গে আমাদের অল্প-বিস্তর হলেও সাক্ষাৎ হতো। আসলে কোনো যন্ত্রের সাহায্যে এর কোনো সমাধান নেই। সমাধান পেতে হলে যেতে হবে সার্জারিতে। পুরোনো আবর্জনা পরিষ্কার করে ঢেলে সাজাতে হবে পুরো ব্যবস্থাপনাকে। কথাটা যত সহজেই বলা যায়, কর্মটি অত সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন অনেক সময়ের। সময়ের থেকে জরুরি সিদ্ধান্তের। আমরা মনে করি, সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা বিশ্বাস করি, একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দেশের অনেক কিছুকেই বদলে দিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর অনেক উদাহরণ তৈরি করেছেন। এ দেশের মানুষই তার সাক্ষী। আমরা সড়ককে নিরাপদ দেখতে চাই। রাষ্ট্র ও সরকার আমাদের সেই আকাক্সক্ষা পূরণে এগিয়ে আসবে এটাই প্রত্যাশা।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চোর,ধর্মের কাহিনী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close