সম্পাদকীয়

  ১৯ জুলাই, ২০২১

নামেই ‘লাইন খরচ’ আসলে চাঁদাবাজি

একদিকে করোনার সীমাহীন তাণ্ডব, অন্যদিতে রেকারত্ব, কর্মহীন মানুষের নাভিশ্বাস। লকডাউনে টানা দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর সবকিছু সচল হয়েছে। কিছুটা নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছে মানুষ। সামনে ঈদুল আজহার ছুটি। গ্রামের পথে ছুটছে শহরের মানুষ। গণপরিবহন চালু হয়েছে। সরগরম রাজপথ। আর স্বাভাবিক নিয়মেই যেন শুরু হয়েছে অনৈতিক উপার্জন। অনৈতিকতা যখন রক্তের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন উপার্জন আর থেমে থাকবে কেন! সেও সরগরম হয়ে উঠতে শুরু করেছে। গণপরিবহন চালু হলেও ‘লাইন খরচ’-এর নামে চাঁদা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

লকডাউন থাকাকালীন পাশে কেউই ছিল না। কষ্টটা মাথায় নিয়ে চলতে হয়েছে এই খাতের হাজার হাজার শ্রমিককে। তাই ঈদের আগে কয়েক দিনের জন্য পরিবহন চালানোর অনুমতি পেলেও তাতে খুব একটা খুশি হতে পারেননি শ্রমিকরা। সেই আগুনে ঘি ঢালার জন্য এগিয়ে এসেছে চাঁদাবাজরা। রাস্তায় নামলেই লাইন খরচের নামে দিতে হচ্ছে চাঁদা। এমনিতেই ১৪ দিনের লকডাউনে তারা দিশাহারা। অভাবের ক্ষত এখনো সরেনি। সামনে আবার লকডাউন হওয়া না হওয়ার আশঙ্কায় তারা শঙ্কিত। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনৈতিক ধারালো ব্লেড ‘লাইন খরচ’। এতে তাদের দুশ্চিন্তার মাত্রা আরো বেড়েছে। বিষয়টি সত্য হলেও প্রতিরোধের কেউ নেই। কেননা রক্ষক যখন ভক্ষক হবে তখন আর কারো কিছুই করার থাকে না।

লাইন খরচসহ নানা অজুহাতে প্রতিদিন সড়কে তাদের যে চাঁদা দিতে হচ্ছে তা নিয়ে ক্ষুব্ধ পরিবহন শ্রমিকরা। করোনার কথা মাথায় রেখে আপাতত যেন এই চাঁদা তোলা বন্ধ হয় সেই দাবিও তুলেছেন তারা। দু-একটি কোম্পানির গাড়ির শ্রমিকরা প্রথম দিনে রাস্তায় নানা খাতের নামে চাঁদা দেওয়া থেকে রক্ষা পেলেও অনেকেই মুক্তি পাননি। বরং চাঁদার টাকা দিতে না চাইলে তাদের দিকে তেড়ে আসার ঘটনা ঘটেছে। হুমকিও দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে গাজীপুর রুটে চলাচলকারী প্রতিদিন প্রতিটি পরিবহনকে চাঁদা হিসেবে গুনতে হচ্ছে ৮৫০ টাকা। দিনে আয় যতই হোক না কেন চাঁদার হাত থেকে মুক্তি নেই। তথ্য মতে, সারা দেশের মতো ঢাকায় প্রত্যেক রুটে বাস চলাচল করতে করতে মালিক সমিতি লাইন খরচসহ আরো কিছু অঘোষিত নিয়মের বেড়াজালে শ্রমিকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য এই অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হলেও চাঁদাবাজি থামেনি। প্রশাসন কঠোর হলেই যা বন্ধ করা সহজ, কিন্তু তা হচ্ছে না। আমরা দেখেছি, প্রশাসন যখন কঠোর হয়েছে তখনই রাস্তা থেকে এরা সরে পড়েছে। আবার শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরোনো চিত্র। আমরা মনে করি, এ যেন ইঁদুর-বিড়ালের লুকোচুরি খেলা। এ খেলার শেষ কোথায় তা আমরা জানি না। তবে এ কথা না বললেই নয় যে, এটি বন্ধ করা সম্ভব। প্রশাসন যদি নৈতিকতার অবস্থানে দৃঢ়তা দেখাতে পারে, তাহলে আর অন্যকিছুর প্রয়োজন হবে না। পরিবহন শ্রমিকরা কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পাবে। তবে কথায় বলে, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা পরাবে কে? নৈতিকতার পক্ষে দাঁড়ানোর মতো মানুষটি কোথায়!

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চাঁদাবাজি,সম্পাদকীয়,লাইন খরচ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close