সম্পাদকীয়

  ২১ জুন, ২০২১

প্রশংসনীয় উদ্যোগ ডিজিটালে ভূমিকর

প্রযুক্তি আমাদের অনেক দিয়েছে। নিয়েছেও অনেক। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে আমরা হারিয়েছি আমাদের মানবিক বোধ। মানবিক মানুষ এখন পরিণত হয়েছে যান্ত্রিক মানবে। তবু প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে আমাদের এক মুহূর্তও চলে না। আমরা যেন গতিহীন হয়ে পড়ি। আসলে প্রযুক্তির নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। পেছনে যে শক্তি কাজ করে, তা হচ্ছে মানুষ। কোথায় কখন এবং কীভাবে ব্যবহার করা হবে, সে সিদ্ধান্ত মানুষের। তাই প্রযুক্তির কারণে সমাজে যদি কোনো ক্ষতি হয়ে থাকে, সে ক্ষতির দায় তাদের নয়, দায় মানুষের। কেননা মানুষই এটি ব্যবহার করে, নিয়ন্ত্রণ করে। কোথায় ব্যবহার করবে, নৈতিক-অনৈতিক বিচারের দায় মানুষের।

প্রকৃত অর্থেই প্রযুক্তি সব সময়ই আমাদের সাহায্যকারী বন্ধু। আমরা যদি সেই বন্ধুত্বের মর্যাদা দিতে ব্যর্থ না হই, তাহলে পৃথিবী খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একটি নান্দনিক বাগানে পরিণত হতে পারে। কিন্তু আমরা তা পারি না। পারি না বলেই সমাজে এত হানাহানি, বৈষম্য আর অনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে আমাদের বসবাস। আর এভাবে বসবাস করতে করতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে আমরা পরিণত হয়েছি এক দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে। কোনো কিছুতেই যেন লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। নানাভাবে চেষ্টা করার পরও তা থামেনি। শেষ পর্যন্ত প্রযুক্তির কাছে হাত পাততে হয়েছে। সরকারও সে পথেই হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তির (ডিজিটাল) আওতায় আসছে ভূমিকর বা জমির খাজনা আদায় ব্যবস্থা। সারা দেশের ভূমি মালিকদের আনা হচ্ছে অনলাইন নিবন্ধনে। এরই মধ্যে সীমিত আকারে শুরু হয়েছে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর নেওয়ার কার্যক্রম। জুলাই থেকে শুরু হবে পুরো মাত্রায়। অতীতে কর ফাঁকি দেওয়ার যে সুযোগ ছিল, এ উদ্যোগ নেওয়ার কারণে তা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ফলে ভূমি খাত থেকে রাজস্ব বাড়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তথ্যমতে, জনগণের হয়রানি লাঘব, অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ ও সরকারি রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে মন্ত্রণালয় থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মানুষের ইতিবাচক সাড়াও এসেছে। এরই মধ্যে ১২ লাখ ২৬ হাজারেরও বেশি ভূমি মালিক অনলাইনে করদাতা হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। প্রতিটি ইউনিয়নকে একটি ডিজিটাল মৌজা হিসেবে চিহ্নিত বা ডিজিটাল ইউনিট মৌজা হিসেবে ধার্য করা হয়েছে। এভাবেই এ উদ্যোগ এগিয়ে যাবে জেলা বিভাগ ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আপাতত সারা দেশে লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ কোটি হোল্ডিং মালিককে শনাক্ত করা। এরা সবাই কর প্রদানের আওতায় আসবেন। এসব মালিকের কাছ থেকে সরকারের বার্ষিক রাজস্ব আদায় হবে প্রায় ৬২৩ কোটি টাকা।

ডিজিটাইল করার পর কেবল যে সরকারই লাভবান হবে, তাও নয়। এখানে সাধারণ মানুষেরও উপকাররের পথ খুলে যাবে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে জমির খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) দেওয়া যাবে। আবার যেকোনো সমস্যা অনলাইনে যোগাযোগ করে তার সমাধানও পাওয়া যাবে। ফলে মানুষের ভূমি-সংক্রান্ত হয়রানি কমবে এবং ভূমি অফিসের দুর্নীতি বন্ধ হবে।

আমরা মনে করি, প্রযুক্তিনির্ভর এ উদ্যোগ গ্রহণের ফলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে সাধারণ মানুষ। তারা প্রথমত, অনৈতিক মানুষ ও অনৈতিক ব্যবহারের হাত থেকে মুক্তি পাবে। দ্বিতীয়ত, তাদের বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষার যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে না। তৃতীয়ত, কাজের গতি বহু গুণে বেড়ে যাবে। অতএব প্রযুক্তি তোমাকে সালাম। মন্ত্রণালয়কে সাধুবাদ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,প্রযুক্তি,ভূমিকর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close