সম্পাদকীয়

  ১৮ জুন, ২০২১

পারিবারিক সহিংসতা রোধে এগিয়ে আসতে হবে

পারিবারিক কলহের ঘটনা এখন অহরহই শোনা যাচ্ছে। মাত্রা বেড়েছে। তাই প্রতিদিনই মুখোমুখি হতে হচ্ছে খুন, জখম আর নির্যাতনের। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মা ও শিশুরা। মাত্রা বাড়তে বাড়তে এমন একপর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যা জাতির জন্য উদ্বেগজনকও বটে। এক দিনে আমরা এ পর্যায়ে আসিনি। মূলত অর্থনীতির চরিত্রই গোটা জাতির চরিত্রকে আজ এ পর্যায়ে এনে দাঁড় করিয়েছে।

আমরা জানি, পৃথিবীতে যখন নতুন কোনো দেশের জন্ম হয়েছে, সে দেশের পুঁজির একটি অংশ লুটেরা পুঁজির ধারক-বাহক হয়ে বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে। অনেক দেশে তা নিয়ন্ত্রিত হয়ে জাতীয় পুঁজির স্রোতের সঙ্গে একীভূত হয়ে সামনের দিকে এগিয়েছে। এই এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল মূলত যারা দেশ শাসন করেছেন অর্থাৎ রাজনীতিকদের ওপর। আমাদের দেশে সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হয়নি। হয়নি বলেই লুটেরা পুঁজি নেতৃত্বে এসেছে। আর এই পুঁজির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আজ পারিবারিক দরজা দিয়ে ঘরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গ্রাস করেছে মানুষের নান্দিক মানবিকতাকে। বেড়েছে পারিবারিক কলহ। বেড়েছে খুন, গুম, জখম আর নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো।

গত বুধবার সকালে সিলেটের গোয়াইনঘাটে দুই শিশুসহ মাকে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ তদন্তে নেমেছে। ফলাফল এখনো মেলেনি। তবে সবাই পারিবারিক কলহকেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে ধারণা করছেন। প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটিত না হলেও বলা যায়, মানুষের চরিত্র আর মানবিকতার ধারে কাছেও নেই। যারা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন, তারা পাশবিকতার শেষপর্যায়ে উন্নিত হয়েই কাজটি করেছেন। যে বা যারাই এ অপকর্মটি করেছেন তারা ক্ষমার অযোগ্য। আইন অবশ্য যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। এখানে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তবে এ রকম ঘটনা যে অহরহই ঘটছে, তার সমাধান কোথায়! আজ টাকার কাছে সবকিছুই মাথা নত করে আছে। সমাজের কোথাও তার প্রতিবাদ নেই। বরং পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষে সহযোগিতার প্রতিচ্ছবিই প্রতিবিম্বিত হচ্ছে। আর এভাবে চলতে থাকলে এক দিন এ দেশে একজনও মানবিক লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়াবে।

এদিকে পুলিশ সুপার বলেছেন, পারিবারিক দ্বন্দ্ব এবং মামাবাড়ির সঙ্গে ঝামেলার কারণে এই হত্যাকান্ড ঘটতে পারে। এ ছাড়া শিশুদের বাবা হিফজুর রহমানের পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণেও এটি হতে পারে। হিফজুর রহমানকেও সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে। পুলিশ তার কাজ করবে। তদন্ত শেষে রিপোর্ট পেশ করবে। অতঃপর বিষয়টি আদালতে যাবে। সেখানে বিচার হবে। কিন্তু দুই শিশুসহ মায়ের জীবন কি ফিরিয়ে দেওয়া যাবে! প্রায় প্রতিদিন দেশে এ রকম ঘটনা যে ঘটেই চলেছে। থামানোর কোনো ফর্মুলা তৈরি হয়েছে কি!

জানা মতে, প্রতিকারের কোনো প্রতিষেধক আমাদের হাতে নেই। রক্তের ভেতরে যে ভাইরাস প্রবেশ করেছে তা বের করতে না পারলে এখান থেকে বেরিয়ে আসা প্রকৃত অর্থে অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই ঘটে যাওয়া ঘটনার দিকে না তাকিয়ে গোড়ায় হাত দেওয়াটাই উত্তম। এ প্রশ্নে পুঁজির চরিত্র গঠনের দিকে মনোযোগী হওয়াটাই হবে প্রধান কর্ম। মনে রাখা জরুরি, লুটেরা পুঁজি তার নিজস্ব চরিত্রের উল্লম্ফন ঘটাবে; যা সব সময় সমাজের অকল্যাণই ডেকে আনবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সম্পাদকীয়,পারিবারিক সহিংসতা,মুক্তমত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close