সম্পাদকীয়

  ১৬ জুন, ২০২১

নিজের পায়ে কুড়াল মারা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়

সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম, দুর্নীতি ও জনবল সংকট নিয়ে সংসদে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা সমালোচনার ঝড় তুলেছেন। বলেছেন, বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা। প্রশ্ন হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ করবে কে? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, এখানে দুটি পক্ষের সমান দায়িত্ব রয়েছে। একটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অন্যটি যাদের মেনে চলতে হবে অর্থাৎ সাধারণ মানুষ। প্রকৃত অর্থে কেউই করোনাকে তোয়াক্কা না করে নিজেদের ইচ্ছামাফিক ছুটে চলেছেন। ফলে করোনার সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ছে। সংক্রমণ আবারও ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করেছে। সংক্রমণ বাড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

বাস্তবতা বলছে, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সফল হয়েছে। তুলনামূলক বিচারে আমরা এখনো অনেকের চেয়ে ভালো আছি। এটা আল্লাহর বিশেষ রহমত বলতেই হয়। পাশের দেশ ভারতের অবস্থা লেজে গোবরে। কিন্তু আমরা কি কেবলই আল্লাহর রহমতের দিকে তাকিয়েই থাকব! আমাদের কি কিছুই করণীয় নেই? আল্লাহ বলেছেন, যে জাতি নিজের মঙ্গলের কথা ভাবে না, আল্লাহও তার মঙ্গলের জন্য এগিয়ে আসেন না। এ কথা মনে রেখেই বলতে হয়, যদি রহমত সরিয়ে নেওয়া হয়, তখন আমাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে! বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের সচেতন হওয়ার সময় এসেছে।

সবাই বলছেন, করোনা মোকাবিলায় টিকাদান কর্মসূচির বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যদিও টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে সবাই এখনো নিরাপদ অবস্থানে নেই। টিকা সংগ্রহে সরকারের সাফল্য এখনো চোখে পড়ার মতো হয়ে উঠেনি। তবে চেষ্টা চলছে। কিছুটা প্রাপ্তিযোগও দেখা দিয়েছে। এ কথাও সত্য যে, টিকা নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলছে এক রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা। সেখানে মানবিক দিককে গুরুত্বে আনা হয়নি। তাই টিকা সংগ্রহের প্রশ্নে বাংলাদেশ একক ভুক্তভোগী দেশ নয়। আমাদের মতো দেশের সংখ্যাও কম নয়। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে কী করা উচিত, তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আমরা সবাই বাঁচতে চাই, সুস্থ থেকেই বাঁচতে চাই। তার জন্য প্রয়োজন নিজের সুরক্ষায় নিজেকে এগিয়ে নেওয়া। বাস্তবতা বলছে, এখানে ঘাটতি প্রচুর।

করোনা মহামারির সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি বিধিনিষেধের মধ্যে ছিল বাসে অর্ধেক যাত্রী নেওয়া। এ ক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল ৬০ শতাংশ। প্রথমদিকে নিয়ম মানা হলেও এখন যেন সে নিয়মের অপমৃত্যু হয়েছে। এখন শতভাগের বেশি যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৬০ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া যাত্রী, চালক ও সহকারী কেউই তোয়াক্কা করছেন না স্বাস্থবিধি মানার। তবে শুধু বাসেই নয়, রাস্তাঘাট, বাজার সব জায়গাতেই একই চিত্র। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে যে লক্ষ্যে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে, তা পূরণ হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। মহামারির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ তো হবেই না, বরং পরিস্থিতি হবে আরো ভয়াবহ।

বিশেষজ্ঞদের মতামতকে সমীহ করেই বলতে হয়, ভয়াবহ পরিস্থিতি হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। সুতরাং নিজের এবং পরিবারের সব সদস্যের জীবন বাঁচাতে নিজেকেই দায়িত্ব নিতে হবে। নিজের পায়ে কুড়াল মারা থেকে সরে এসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দিকে ঝুঁকতে হবে। কবে এ দেশের সব মানুষ টিকার আওতায় আসবে, তার দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজের সুরক্ষায় নিজেকেই এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই হয়তো বাংলাদেশ করোনা প্রতিরোধে বিশ্ব মানচিত্রে একটি উদাহরণ হয়ে থাকার মর্যাদা লাভে সক্ষম হবে। সেটাই জাতির প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মুক্তমত,সম্পাদকীয়,সুরক্ষা,বিধিনিষেধ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close