সম্পাদকীয়

  ১৫ জুন, ২০২১

অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুখতে হবে

স্বপ্ন মানুষকে বাঁচতে শেখায়। এগিয়ে নেয়। সুন্দর জীবন গড়তে অনুপ্রাণিত করে। কিস্তু কখনো কখনো সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। শুধু তা-ই নয়; একটি জীবনের নির্মম পরিণতি গোটা পরিবারকে বয়ে বেড়াতে হয়। তার পরও লোভের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না তরুণ-যুবকরা। বারবার নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও মূল্যবান জীবনহানির পরও তাদের বোধোদয় হচ্ছে না। পশ্চিমা জগতের তথাকথিত উন্নত জীবন তাদের প্রলুব্ধ করছে। ছাড়ছে পরিবার-পরিজন ও দেশের মায়া। অকাতরে হারাচ্ছে জীবন। সঙ্গে বিপুল অর্থ। যা দিয়ে দেশেই নিজেকে গড়ে তুলতে পারতেন। হতে পারতেন একজন সফল উদ্যোক্তা। তা না করে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে তারা যেভাবে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছেন, এতে জীবন যেমন বিপন্ন হচ্ছে, তেমনি সম্ভ্রমহানি হচ্ছে দেশের। অথচ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত আমাদের দেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে।

বলা সংগত, অনেকে অসাধুদের খপ্পরে পড়ে বিপজ্জনক পথে পা বাড়ান। মানুষের সরল স্বপ্নকে পুঁজি করেই নিজেদের স্বার্থে অন্ধ হয়ে উঠে দালাল ও পাচারকারীরা। স্বপ্ন পূরণের প্রলোভন দেখিয়ে হত্যাকারীর মতো মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এ রকম কত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। অবৈধভাবে ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে সাগরে নৌকাডুবিতে মৃত্যু কিংবা সাগরে দিনের পর দিন ভেসে বেড়ানোর খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে আসে। তাদের অনেকেই বাংলাদেশি। খাবার আর নিরাপদ পানির অভাবে তাদের সাগর কিংবা বিদেশের জঙ্গলে অবর্ণনীয় কষ্টে দিন কাটানোর খবরও পাওয়া যায়। কারো ঠাঁই হয় বিদেশের অভিবাসী কেন্দ্র বা কারাগারে। আবার চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের দেশে পৌঁছাতে পারলেও দিন কাটে নানা শঙ্কায়। কাজের খোঁজে গিয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন অনেক নারী।

সম্প্রতি লিবিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগর থেকে ৪৩৯ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে দেশটির কোস্টগার্ড। লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে ১৬৪ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। এর আগে গত ২৭ ও ২৮ মে ২৪৩ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তারা বর্তমানে কোথায় কী অবস্থায় আছেন, সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি। তবে উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসা প্রসঙ্গে দূতাবাস কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মাধ্যমে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টার সময় দেশেও নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অনেকে ধরা পড়েছেন। বিজিবি এ বছর জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া ও পাচারের শিকার শিশুসহ ৩৪১ জনকে আটক করেছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযানে ধরা পড়ছে দালাল চক্রের সদস্যরাও। বলা যায়, নিজেদের স্বার্থে ও দেশের স্বার্থে তরুণদের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। সেসঙ্গে প্রত্যেকের নিজের জায়গা থেকে দায়িত্বশীল হওয়াসহ রাষ্ট্রেরও এ বিষয়ে জোরালো ভূমিকা নিশ্চিত করা জরুরি। আর তা হলেই প্রবাস জীবনের হাতছানিতে অবৈধ পথ বেছে নেওয়া তরুণদের প্রতিযোগিতা কমবে। পাশাপাশি অভিভাবকদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়বে। এ ছাড়া পাচারকারীর হাত থেকে রক্ষা পাবেন দেশের অগণিত তরুণ-যুবক।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অবৈধ অভিবাসন,সম্পাদকীয়,ভূমধ্যসাগর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close