সম্পাদকীয়

  ১৪ জুন, ২০২১

করোনাভাইরাস সরাতে চাই যূথবদ্ধ উদ্যোগ

কার পাপে পুড়ছে আমাদের প্রিয় পৃথিবী। একটি ভাইরাসের কাছে পরাজিত আজ মানবসভ্যতা। কিন্তু কেন! এ জিজ্ঞাসার কি কোনো উত্তর নেই। অনেকের মতে, আমাদের পাপেই আজ এসব ভোগান্তি। এ সময় একটি ধর্মীয় নীতিকথার কথা মনে পড়ে। নীতিকথায় বলা হয়েছে, সীমা লঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। বিজ্ঞানও সেই একই কথার সমর্থক। প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস আজ এই নীতিবাক্যটির সত্যতা প্রমাণ করেছে। মানুষের ভোগবাদী চিন্তার চূড়ান্ত বিকাশ আজ মানুষকে এই ভয়াবহ দুর্যোগের মাঝে টেনে নামিয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বিশ্বমানব সম্প্রদায়কে ভোগবাদী চিন্তার চূড়ান্ত বিকাশ বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কাজটি সহজ নয়। তাই এ মুহূর্তে আশু প্রয়োজন হচ্ছে, চলমান করোনা পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করা। আর সে কাজের জন্য চাই যূথবদ্ধ উদ্যোগ।

কোভিড-১৯ যেন দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। গ্রাস করছে গোটা বিশ্বকে। সেই ভয়ংকর রূপেই যেন এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। শহর, নগর, বন্দর ছাড়িয়ে এই মহামারির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্ত এলাকার জেলাগুলোয়ও। শহর থেকে গ্রাম, এখন সর্বত্রই এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোভিড সংক্রমণ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হলে শুধু প্রশাসনের পদক্ষেপে সফলতা আসবে না। প্রশাসনিক নির্ভরতা কমিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যাপকভাবে প্রান্তিক মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। বন্ধ রাখতে হবে আন্তজেলা গণপরিবহন। সীমান্তবর্তী জেলাসমূহকে আনতে হবে লকডাউনের আওতায়। এসব ব্যবস্থা নেওয়া গেলে সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞ বা সংশ্লিষ্টদের পরামর্শগুলো ইতিবাচক। তা গ্রহণ করার মাঝে কোনো বাধা নেই। ইতোমধ্যে সরকার বেশকিছু উদ্যোগও নিয়েছে। কিন্তু তেমন কোনো সফলতার খবর নেই। স্বাভাবিক কারণে প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে, সফল না হওয়ার কারণটা কী। এ প্রশ্নের জবাবে বাস্তবতা বলছে, সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে এ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সরকারের একার পক্ষে সামাল দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে সরকারের যে দায়িত্ব তাও অবহেলিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ মুহূর্তে টিকা পাওয়াটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকার যে চেষ্টা করছে, এ কথা সত্য। তবে এ সত্যের বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। সময় বলছে, যত দ্রুত বাস্তবায়িত হবে, ততই মঙ্গল।

সরকারের কাজ সরকার করবে। বিফল হলে তার দায় তাকেই বহন করতে হবে। তবে সাধারণ মানুষেরও কিছু দায়িত্ব আছে। সে দায়িত্ব পালন অন্য কারো দ্বারা সম্ভব নয়। তারা ব্যর্থ হলে, দায় তাদেরও বহন করতে হবে। তবে দায় কে বহন করবে, সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে, আমাদের অবহেলায় দেশ ও জাতির ক্ষতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তখন আমরা কেউই আর ভালো থাকতে পারব না। সবাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হব। কিন্তু আমাদের চাওয়া তো নেতিবাচক বৃত্তে আটকে থাকতে পারে না। আমরা সংক্রমণকে সরাতে চাই। যদি সত্য সত্যই আমাদের চাহিদা ইতিবাচক হয়, তাহলে ইতিবাচক কর্ম দিয়েই আমাদের দায়িত্ব পালনে ইতিবাচক ভূমিকায় নামতে হবে। সংক্রমণ রোধের নিয়মাবলিকে ফরজ কাজের মতো বাধ্যতামূলক বলে মনে করতে হবে। আর এই মনে করার মধ্যেই নিহিত আছে মুক্তির পথ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করোনাভাইরাস,সম্পাদকীয়,সংক্রমণ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close