মোতাহার হোসেন

  ০৮ জুন, ২০২১

জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসে চাই কূটনৈতিক তৎপরতা

উন্নত বিশ্ব তাদের আরাম, আয়েশ ও ভোগবিলাসের জন্য উন্নয়নের মহাযজ্ঞে লিপ্ত থাকায় পৃথিবী নামক উপগ্রহের বায়ুমন্ডলে কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে। সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতাও বাড়ছে। পাশাপাশি বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হওয়ায় ক্রমশ মেরু অঞ্চলের বরফ গলে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। এতে জলবায়ুর ওপরও পড়ছে বিরূপ প্রভাব। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশসহ ছোট ছোট দ্বীপরাষ্ট্র ও সমুদ্র উপকূলবর্তী ব-দ্বীপ অঞ্চলগুলো হুমকিতে পড়বে। বৈশ্বিক উঞ্চতা বৃদ্ধির ফলে বরফ গলার পাশাপাশি বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এই ক্ষতির সিংহভাগ দায় উন্নত দেশগুলোর হলেও ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। এই ক্ষতি ও বাস্তবতার নিরিখে এবারে পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল উক্ত নিবন্ধের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রতিবেশের পুনরুদ্ধার, হোক সবার অঙ্গীকার।’ আর স্লোগান হচ্ছে ‘জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করি।’ পরিবেশ, প্রতিবেশ, প্রকৃতি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবে এই প্রত্যাশা।

জলবায়ু পরিবর্তন-সংক্রান্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো বায়ুমন্ডলে কার্বন নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে তা পূরণ করছে না। জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকির প্রধান শিকারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২০১৬ সাল ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। এ সময় সমুদ্রের উপরিভাগের জলের তাপমাত্রাও বেড়ে গিয়েছিল; যা ‘এল নিনো’ হিসেবে পরিচিত। এর ফলে বিশ্বের অনেক জায়গায় অস্বাভাবিক গরম ও শুষ্ক অবস্থা দেখা দেয়, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩৬ কোটি কিলোটন কার্বন ডাই-অক্সাইড (সিওটু) বায়ুমন্ডলে নিগর্ত করে বিশ্ব। এর প্রায় ২৯ শতাংশ চায়না এবং ১৪ শতাংশের বেশি কার্বন নির্গত করে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সব দেশ মিলে কার্বন নির্গত করে ৯ শতাংশ। ক্লাইমেট চেঞ্জ পারফরম্যান্স ইনডেক্স (সিসিপিআই-২০১৭) অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য বেশি দায়ী যুক্তরাষ্ট্র ও চীন কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিশ্ব জলবায়ু রক্ষায় নেওয়া কর্মসূচি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৪৩তম এবং চীনের ৪৮তম। জ্বালানি ও জলবায়ু ইস্যু নিয়ে বিশ্বের খ্যাতনামা ২৮০ জন বিশেষজ্ঞের সহযোগিতায় জার্মানভিত্তিক সংস্থা ‘জার্মানওয়াচ’ এবং ইউরোপিয় সংস্থা ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (সিএএন)’ যৌথভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সিসিপিআই-২০১৭-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব জলবায়ু রক্ষায় ২০১৫ সালে প্যারিসে একটি আন্তর্জাতিক জলবায়ু চুক্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর পরও কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে কোনো দেশই কার্যকর কর্মসূচি গ্রহণ করেনি। বায়ুমন্ডলে কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা অর্ধশতাধিক দেশের ওপর এই গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফল অনুযায়ী, কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে এবং এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের কারণে এবার সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। বিগত ২০১৫ সালে প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলন কপ (কনফারেন্স অব পার্টিজ)-২১-এর আয়োজক এই দেশের স্কোর ৬৬ দশমিক ১৭। সিসিপিআই-২০১৬ অনুযায়ী দেশটির অবস্থান ছিল অষ্টম। এবার পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও সাইপ্রাস।

সুইডেন একধাপ উঠে এসেছে, যুক্তরাজ্য এক ধাপ নিচে নেমেছে আর সাইপ্রাস দুই ধাপ ওপরে উঠেছে। অষ্টম স্থান দখল করেছে মারাকাশে কপ-২২ আয়োজনকারী দেশ মরক্কো। গতবার দেশটির অবস্থান ছিল দশম। গতবারের চেয়ে দুই ধাপ নিচে নামা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান ৪৩তম। চীন এক ধাপ নেমে বর্তমানে ৪৮তম স্থানে রয়েছে। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু ও উন্নয়ন শীর্ষক সম্মেলন (ইউএনসিইডি) বা ‘রিও আর্থ সামিট’ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এ সংক্রান্ত ঝুঁকির বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রম শুরু হয়। বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন কনভেনশন বা ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি)-এর সদস্য দেশগুলোকে নিয়ে ১৯৯৫ সালে বার্লিনে প্রথম কপ (কনফারেন্স অব পার্টিজ) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ স্পেনে অনুষ্ঠিত হয় কপ-২৩। কিন্তু প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়ন থেকে ট্রাম্পের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়েছে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়ন। এখন অবশ্য বাইডেন ফের এই চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে তার অঙ্গীকার ব্যক্ত করায় আবার আশার আলো দেখছে বিশ্ব।

এমনি অবস্থায় স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য কপ-২৪-এর পুরো বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে, প্যারিস জলবায় চুক্তির প্রকৃত ভবিষ্যৎ। আপাতত সে পর্যন্তু অপেক্ষা করতে হবে বাংলাদেশসহ জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশসমূহকে। জলবায়ু বিশ্লেষকরা বলছেন, তিন দশক ধরে জাতিসংঘ সমর্থিত ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) ও ইউএনএফসিসিসি কেবল নামের মধ্যেই এর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রেখেছে। কপ-২১ সম্মেলনে নীতিনির্ধারকদের আলোচনা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য খানিকটা আশার সঞ্চার করেছিল। প্যারিসে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে বারাক ওবামার নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রসহ অংশগ্রহণকারী ১৮৭ দেশের প্রতিনিধিরা যত দ্রুত সম্ভব কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমানোর জন্য সম্মত হন। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কিছু দেশের প্রতিশ্রুতি ও দৃঢ় অঙ্গীকার না থাকা সত্ত্বেও সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সর্বোচ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ইউএনএফসিসিসি-এর ১৯৭ সদস্য দেশের মধ্যে ১০৯ দেশ প্যারিস চুক্তি অনুমোদন করেছে এবং এটি কার্যকর হয়েছে গত বছরের ৪ নভেম্বর থেকে। বাংলাদেশ ২১ সেপ্টেম্বর প্যারিস চুক্তির ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অব রেকটিফিকেশন’ জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে হস্তান্তর করে। বাংলাদেশের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিতে ২০৩০ সাল নাগাদ স্বাভাবিকের তুলনায় ৫ শতাংশ কম কার্বন নিঃসরণ এবং বিদেশি সহায়তা পেলে আরো ১৫ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করার কথা বলা হয়। কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর বিষয়টি অনেকটাই নির্ভর করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ওপর। এ দুই ক্ষমতাধর দেশের প্রতিনিধিরা যদি বিদ্যুৎ ও জীবাশ্ম জ্বালানি শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ডি-কার্বোনাইজ পদ্ধতিকে সক্রিয়ভাবে গ্রহণ করে, তাহলে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমার ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

মারাকাশে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন কপ-২২ এ বিশ্বনেতাদের বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তখন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজ দেশের অভ্যন্তরে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে নজর দেবেন। পরবর্তীকালে তিনি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বাস্তবায়ন থেকে বেরিয়ে যান। নির্বাচনে জয়লাভ করে চলতি বছর মার্চে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ-সংক্রান্ত এক নির্বাহী আদেশে সই করেন। একইভাবে ১৯৯২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের কিয়োটো প্রটোকল থেকে সরে আসার ফলে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক একটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বিশ্বকে আরো দুই দশক অপেক্ষা করতে হয়েছিল। অবশ্য আশার কথা বাইডেন প্রশাসন জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে অঙ্গীকার ব্যক্ত করায় আশার আলো দেখছে বিশ্ব।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্থ সহায়তার আহ্বানে সাড়া দিতে ১৯৪ দেশ নিয়ে ইউএনএফসিসিসি-এর কানকুন সম্মেলনে ২০১০ সালে গঠন করা হয় গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) বা সবুজ জলবায়ু তহবিল। দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক এই সংস্থাটির লক্ষ্য ছিল কার্বন নিঃসরণে এগিয়ে থাকা উন্নত দেশ ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ সহযোগিতা নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা প্রদান করা। তবে এখনো আশানুরূপ তহবিল জোগাড় করতে সক্ষম হয়নি জিসিএফ। বাংলাদেশ জিসিএফের অস্থায়ী সদস্য ছিল। বাংলাদেশ নিজ উদ্যোগে নিজস্ব সম্পদ দিয়ে ৪০০ মিলিয়ন ডলার তহবিলের ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে বিশ্বদরবারে প্রশংসিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও গৃহীত কর্মসূচির কারণে বাংলাদেশকে জিসিএফের স্থায়ী সদস্য হিসেবেও কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। বর্তমানে জিসিএফের খুব বেশি অর্থ নেই। ২০২০ সালের মধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার তহবিল গঠনের লক্ষ্যে জিসিএফের সদস্য দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছে।

ঝুঁকিতে থাকা দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৮০ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহযোগিতা পেয়েছে। এরমধ্যে জিসিএফের তহবিল থেকে এসেছে ৪০ মিলিয়ন। এই টাকা দিয়ে সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ এবং এ জাতীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালতি হচ্ছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এসব বাস্তবায়ন করছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রীর সাম্প্রতিক এক বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন একটি বড় সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব লাঘবে আমাদের ভূমিকা খুবই নগণ্য, উন্নত বিশ্বের বড় বড় দেশের ওপরই এটি নির্ভর করে। জলবায়ু তহবিল, টেকনোলজি, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক জলবায়ু প্রশমন হ্রাস-সংক্রান্ত বিষয়ে উন্নত বিশ্বের ভূমিকাই মুখ্য। তাই আমাদের করণীয় হবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি নিরসনে বৈশ্বিক পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে পরিবেশ, প্রতিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম

[email protected]

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জলবায়ু,কূটনৈতিক তৎপরতা,মুক্তমত,ক্লাইমেট চেঞ্জ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close