সম্পাদকীয়

  ০৮ জুন, ২০২১

প্রতি ইঞ্চি জমির ব্যবহার নিশ্চিত হোক

দেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। হোক তা বাড়ির আঙিনা, খোলা মাঠ, সড়কের আশপাশ। যেখানেই হোক ফসল ফলাতে হবে। বাড়াতে হবে উৎপাদন; যাতে খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারে মানুষ। পেতে পারে সুখী ও সুন্দর জীবন। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির ওপরই এ দেশের অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভরশীল। এ ছাড়া দেশের খাদ্য চাহিদা মেটাতে যে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্যের প্রয়োজন হয়, তা আসে কৃষিজমি থেকেই। কিন্তু দেশে নানাভাবে জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে; যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। এ অবস্থা চলতে থাকলে খাদ্য চাহিদা মেটানো তো দূরের কথা বরং প্রবল সংকটের মধ্যে পড়বে দেশ; যা কারো কাম্য নয়।

প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিতে আবাদ করতে গ্রামের মানুষকে আয়বর্ধক কাজে সম্পৃক্ত করতে চায় সরকার। সেই বাস্তবতায় গত বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে, সেই নির্দেশনা দেন। সেই নিরিখে ‘অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। যা বাস্তবায়নে খরচ হবে ৪৩৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। দেশের ৬৪ জেলার ৪৯২ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্প শেষ হবে ২০২৩ সালে। এতে সফলতা পাওয়া গেলে পরে আবারও তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর যে হারে বেকারত্ব বাড়ছে মূলত সরকারের সেই প্রকল্প জাতির জন্য একটি আশীর্বাদ। কারণ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরিচালিত এ প্রকল্পের মাধ্যমে অনেক কর্মহীনের কর্মসংস্থান হতে পারে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।

দেশে বর্তমানে আবাদ হতে পারে এমন জমির পরিমাণ ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬৮ হেক্টর। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিপুল পরিমাণ জমিতে শাকসবজি এবং ফলমূল উৎপাদনের ফলে মানুষের পুষ্টিহীনতা যেমন দূর হবে; তেমনি খাদ্য নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। করোনার কারণে গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর চাপ পড়েছে। সেই অবস্থায় এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি পড়ে থাকুক, আমরা চাই না। তাই এমন ব্যবস্থা করা হোক, যাতে বাড়ির চারপাশে নানা ধরনের সবজি ও ফলমূল উৎপাদন করতে পারবেন কৃষক। যার মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হবে।

বলা সংগত, দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ঘরবাড়ি। যার অধিকাংশ তৈরি হচ্ছে কৃষিজমিতে। এ ছাড়া জনসংখ্যা বাড়ার প্রভাব পড়ছে অন্যান্য ক্ষেত্রে। নতুন রাস্তাঘাট, অবকাঠামো নির্মাণ করতে হচ্ছে। বাড়ছে শিল্প-কারখানা। এসবের জন্য কৃষিজমিই ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীভাঙনের ফলেও কৃষিজমি কমছে। এসব কারণে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে প্রতি ইঞ্চি কৃষিজমি আবাদের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি অনাবাদি জমিতে চাষাবাদে সরকারের গৃহীত প্রতিটি প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। সীমিত আয়তনের বাংলাদেশে প্রতি ইঞ্চি জমির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত হোক তা এখন সবার প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মুক্তমত,সম্পাদকীয়,অনাবাদি জমি,প্রকল্প
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close