সম্পাদকীয়

  ০৭ জুন, ২০২১

এনআইডি ও ইভিএম দ্বন্দ্বের অবসান হোক

কোনো প্রতিষ্ঠানকে ভাঙা হলে কিছু সমস্যা তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এনআইডি ও ইভিএমের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বর্তমানে এই দুটি একই প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করছে। তবে পৃথক অবস্থানের কথাও ভাবা হচ্ছে। আর তা নিয়ে চলছে বিতর্ক। অনেকেই বলছেন, ভাঙাটা ঠিক হবে না। আবার কারো কারো মতে, ভাগ করলে কাজে গতি বাড়বে।

এক পক্ষের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ভোটার তালিকা পৃথক কর্তৃপক্ষের অধীনে গেলে নানামুখী সংকট তৈরি হতে পারে। তাদের মতে, একই ধরনের কাজ পৃথক সংস্থার পরিচালনার কারণে একদিকে ভোটার ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় বিঘœতা বাড়াবে। দেখা দেবে সাংবিধানিক সংকট। নির্বাচন কমিশন ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের মধ্য দিয়ে জনমনে যে আস্থা তৈরি করেছে, সেখানেও দেখা দেবে আস্থাহীনতা। পাশাপাশি প্রযুক্তিবান্ধব ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনও (ইভিএম) হুমকিতে পড়বে। এখন পর্যন্ত ৭ কোটিরও বেশি মানুষের তথ্য ইভিএমে সংযোজিত হয়েছে। নতুন ভোটারদের তথ্যও সংযুক্ত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র একটি আরেকটির পরিপূরক। দুটি আলাদা কর্তৃপক্ষের হাতে গেলে নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেইস নির্ভর ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণকালে জটিলতা সৃষ্টি করবে। আর এটি করা হলে সংবিধানের ১১৯ ধারা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনও সম্ভব হবে না। তাদের মতে, নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এনআইডি স্থানান্তর কমিশনের অঙ্গচ্ছেদের নামান্তর। সংবিধানের ১০৮(৪) ধারায় বলা হয়েছে, শুধু সংবিধান ও আইনের অধীনে থেকে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কাজ করবে।

তারা আরো বলেছেন, জাতীয় ভোটার তথ্যভান্ডারের সার্ভারই ভোটার তালিকার সার্ভার। নতুন আরেকটি সার্ভার স্থাপন করা ছাড়া ভোটার তালিকা থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রকে আলাদা করা যাবে না। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক সংস্থা। সার্ভারটি তাদের নিজস্ব সম্পত্তি। অন্যদিকে আধুনিক প্রযুক্তিসংবলিত স্মার্টকার্ড ছাড়া ইভিএম অচল। কারণ এনআইডি নম্বর দিয়েই কাস্টমাইজ করে ইভিএমকে নির্বাচনের জন্য উপযোগী করা হয়েছে। একটি সার্ভার দিয়ে দুটি আলাদা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। তাই বিদ্যমান অবকাঠামো ছাড়া আলাদা করা অসম্ভব। এর পরও রয়েছে জনবলকে পৃথককরণ, যা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

বিশেষজ্ঞরা যে মতামত দিয়েছেন তাকে একবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। তাদের উল্লিখিত সমস্যার কথা মাথায় রেখে যদি সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া যায়, তাহলে আপত্তি কোথায়। নতুন কিছু করতে গেলে সমস্যা আসবে এবং এটাই স্বাভাবিক। তবে বিকেন্দ্রীকরণে যে লাভ নেই, তা বলা যাবে না। বাস্তবতা বলছে, যেকোনো প্রতিষ্ঠান বিকেন্দ্রীকরণে লাভবানই হয়েছে। তবে এ রকম প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের বিষয়টি খুবই গুরুত্ব বহন করে। আর সে ক্ষেত্রে আন্তরিক হলে কাজের গতি যে বাড়তে পারে, তা অনেকটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

আমরা মনে করি, বিশেষজ্ঞদের মতামত ও সমন্বয়ের বিষয়টিকে মাথায় রেখে চলতে পারলে ফলাফল ইতিবাচক হতেও পারে। কাজের স্বচ্ছতা ও গতি ফেরানোর প্রশ্নে বিষয়টি নিয়ে ভাবার সুযোগ রয়েছে। এক কথায় বাতিল না করে আরো একবার ভেবে দেখাটাই হবে সবার জন্য মঙ্গল।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এনআইডি,ইভিএম,সম্পাদকীয়,জাতীয় পরিচয়পত্র
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close