সম্পাদকীয়
সাগরের উচ্চতা বেড়েছে, অশনিসংকেতে দেশ
বাড়ছে মানব সম্প্রদায়ের অত্যাচার। অস্থির হয়ে উঠছে প্রকৃতি। যেকোনো সময় নেমে আসতে পারে মহাবিপর্যয়। বিজ্ঞানী নিউটনের তৃতীয় সূত্রের কথা জানা থাকলেও আমরা কেউই তা আমলে নিই না। তৃতীয় সূত্রে বলা হয়েছে, যেকোনো ক্রিয়ার একটি প্রতিক্রিয়া আছে। তা হতে পারে সমান মাপের অথবা কম বা বেশি। তবে প্রতিক্রিয়া হবেই। সুতরাং পৃথিবী ও প্রকৃতির সঙ্গে মানব সম্প্রদায় যে অনৈতিক আচরণ করছে, তার একটি প্রতিক্রিয়া আমদের দেখতে এবং সইতে হবে। বিষয়টি এতটাই নিশ্চিত যে, এ নিয়ে নতুন করে ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
আবহাওয়া পরিবর্তন ও বঙ্গোপসাগরের তলদেশে ফাটলের কারণে বাড়ছে সাগরের অস্থিরতা। সাগরের পানি প্রতি বছর বাড়ছে শূন্য দশমিক ১২ ইঞ্চি হারে। এভাবে গত ২৫ বছরে সাগরের উচ্চতা বেড়েছে প্রায় ছয় ফুট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিন যত যাবে পানির উচ্চতাও তত বাড়বে। ফলে দেশের উপকূলীয় এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে। চলমান প্রক্রিয়া চলতে থাকলে ২০৫০ সালে সাগরের স্বাভাবিক উচ্চতা বাড়বে প্রায় চার ফুট। অবস্থাটা একটু বিবেচনায় নিলে যে চিত্র ভেসে ওঠে তা দেশের জন্য ইতিবাচক নয়। বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রাম এবং পর্যটন নগর কক্সবাজার এরই মধ্যে হুমকির মুখোমুখি। হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে এসব অঞ্চলে। সবকিছুই নির্ভর করছে মানুষের স্বভাবজনিত আচরণের ওপর। প্রকৃতিকে শুধু ভোগের সামগ্রী মনে করে ভোগবাদী আচরণ থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে মানব সম্প্রদায়কে তার খেসারত দিতে হবে।
মনে রাখতে হবে, প্রকৃতিরও জীবন আছে। স্পন্দনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবী। সহ্যেরও একটা সীমা আছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সে-ও বিদ্রোহে ফেটে পড়তে পারে। ঘটছেও তাই। তাই সময় থাকতে সাবধান হওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। প্রকৃতিকে নিজ পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে লালন করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তাহলে হয়তো শঙ্কার বোঝাটা কিছুটা হলেও কমে আসতে পারে।
এদিকে ২০১০ সালে বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপাঞ্চলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প এবং ২০১১ সালের ৩ জুন নিকোবর দ্বীপাঞ্চলে ৫ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের কারণে সমুদ্রের ফাটল কী অবস্থায় রয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। ফলে এ নিয়েও সংশয়েরও শেষ নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সংখ্যা, বাড়ছে সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাসের ঘটনা। নতুন করে সৃষ্ট এসব ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা আগের চেয়ে অনেক বেশি। পরিবেশবিদরা বলছেন, মানুষের চরিত্রে পরিবর্তন না এলে প্রকৃতিও তার চরিত্রের এই ভয়ংকর রূপে কোনো পরিবর্তন ঘটাবে না। ভবিষ্যতে তা আরো ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে।
ইতিহাসে বিশ্বের ভয়াবহ ৩৬টি ভয়ংকর সাইক্লোনের মধ্যে ২৬টির জন্ম বঙ্গোপসাগরে। এসব ঝড়ের বেশির ভাগই বয়ে গেছে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে। এসব ঝড়ে মারা গেছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। অবশ্য এখন মৃত্যুর সংখ্যা কমে এসেছে উন্নত প্রযুক্তি এবং সরকারের সচেতনতার কারণে। প্রয়োজন আমজনতার সচেতনতার। এ ব্যাপারে সরকারকে ব্যাপক প্রচার অব্যাহত রাখাই হবে প্রথম পদক্ষেপ।
আমরা মনে করি, সাগরের উচ্চতা বাড়লেও ভূমির উচ্চতা বাড়েনি। বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দিকে এগিয়ে যেতে হবে এবং তা এ মুহূর্ত থেকেই। নতুবা বাংলাদেশ পড়বে অস্তিত্ব সংকটে, যা কখনোই আমাদের কাম্য নয়।
পিডিএসও/হেলাল