সম্পাদকীয়
দেশের ৫০তম বাজেটের কাছে প্রত্যাশা অনেক
বাজেট সরকারের সারা বছরের আয়-ব্যয় হিসাবের প্রাক্কলন। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয়, সব ক্ষেত্রেই বাজেটের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিসরে আমরা বাজেটের বৃত্তে বসবাস করলেও বাজেট শব্দটি থেকে যায় উপেক্ষিত। অর্থনীতিতে বাজেট বলতে, ‘অসীম অভাব ও সীমিত সম্পদের সমন্বয় করাকে বোঝায়। বাজেট একটি রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক দলিল। রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বাজেট একটি দুষ্প্রাপ্য পণ্যের মতো, প্রতিনিয়ত সীমিত সম্পদ ও অসীম অভাবের সমন্বয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে এগিয়ে যেতে হয়। আর এই গতিকে ত্বরান্বিত করতে নির্বাচন করতে হয় চাহিদার সর্বোচ্চ লক্ষ্য। একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য সুষম বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও আধুনিক অর্থনীতির অনেকেই ঘাটতি বাজেটকে ইতিবাচক বলে মনে করেন উন্নয়নের জন্য। বাজেটে একটি দেশের এক বছরের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কৌশল তুলে ধরা হয়। দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, অবকাঠামোগত সুষম উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে জাতীয় বাজেট ব্যাপক গুরুত্ব বহন করে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের হাত ধরেই এসেছে দেশের ৫০তম বাজেট। যার আকার হতে যাচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা গতকাল সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। এটি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২২তম এবং টানা তৃতীয় দফায় বর্তমান সরকারের ১৩তম বাজেট। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এখন শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ। অর্থনীতির অগ্রযাত্রার স্বীকৃতি মিলেছে বিশ্বমঞ্চে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) চূড়ান্ত সুপারিশে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় এখন বাংলাদেশ। এর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিলবে ২০২৬ সালে। তবে বৈশ্বিক মহামারি কোভিডের কারণে এবারের বাজেটেও থাকছে বাড়তি খরচের চাপ; যা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। ফলে আয় ও ব্যয়ের ব্যবধানে বেড়ে যাচ্ছে ঘাটতির পরিমাণও। এমন পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মতো জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি ঘাটতি ধরে চূড়ান্ত করা হয়েছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট। করোনাভাইরাসে থমকে থাকা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সুস্পষ্ট রূপরেখা থাকছে এবারের বাজেটে।
আমরা জানি জাতীয় বাজেটের সিংহভাগ অর্থের জোগান দেয় এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষরা। সে অনুযায়ী বাজেটে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হওয়া জরুরি। আমরা মনে করি, সে আকাঙ্ক্ষার বেশির ভাগই পূরণ হবে। এ কথা সত্য, করোনা মহামারির কারণে আমাদের অর্থনীতি একটি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে। এরই মধ্যে কর্ম হারিয়েছেন অনেক মানুষ। প্রথম দফায় যারা কর্ম হারিয়েছেন তাদের অনেকেই কর্মে ফিরতে পারেননি। অনেকে অভাবের তাড়নায় হতাশায় নিমজ্জিত। ফলে সামগ্রিক ভোগপ্রবণতায়ও এক ধরনের মন্দা চলছে। বলা চলে, আমাদের অর্থনীতির নানা দিক থেকেই সংকুচিত। করোনায় ব্যবসা-বাণিজ্য মন্থর, বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ নানাভাবে সংকুচিত হয়েছে। এমতাবস্থায় আমাদের অর্থনীতিকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম দুটি হচ্ছে দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থান।
আমরা আশা করতেই পারি, বর্তমান সরকার বিষয় দুটি অবগত আছেন এবং সেই লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে। আর সে কারণেই তুলনামূলক বিচারে করোনাকালেও অন্য অনেক দেশের তুলনায় আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান বেশ সুদৃঢ়। এ অবস্থান আরো সুদৃঢ় হবে এটাই জাতির প্রত্যাশা।
পিডিএসও/হেলাল