সম্পাদকীয়

  ০৬ মে, ২০২১

নৌপথের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা জরুরি

নদীমাতৃক দেশ। তাই বুকের ওপর দিয়ে বহমান কত-শত নদী। নদী ঘিরেই অনেক মানুষের জীবন-জীবিকা। যাতায়াত, যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে নদী ঘিরে। নদী দিয়েছে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ পদবি। এ ছাড়া নদী হচ্ছে অনেক মানুষের যাতায়াতের জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। তুলনামূলকভাবে খরচ কম এবং আরামদায়ক হওয়ায় অনেকেই যাতায়াতের জন্য নৌপথ বেছে নেন। দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ কমবেশি নৌপথে যাতায়াত করে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের গণপরিবহন বলতে নৌযানকেই বোঝায়। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও আমাদের দেশের নৌপথ কতটুকু নিরাপদ? আসলে যতটা দরকার তার ধারে কাছেও নেই। নৌপথে সংঘটিত প্রতিটি দুর্ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটি হয়। নিয়ম অনুযায়ী কিছু তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনও জমা দেয়। তদন্ত উঠে আসে নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কথা। অদক্ষ চালক, ত্রুটিযুক্ত এবং লাইসেন্সবিহীন নৌযান, বন্দর তত্ত্বাবধায়ক এবং নৌযান মালিকের দায়িত্বহীনতা। দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে এজন্য অভিযোগের সঙ্গে তদন্ত কমিটি কিছু সুপারিশও করে। কিন্তু এরপর এসব তদন্ত প্রতিবেদন এবং সুপারিশ কোনোটিই আলোর মুখ দেখে না। বিচার তো হনুজ দুরস্ত। আর বিচারের নজির যখন চোখে পড়ে না; তখন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

সবার চোখের সামনে অবাধে চলছে অসংখ্য অনুমোদনহীন যান। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে চালকের অদক্ষতা এবং ত্রুটিপূর্ণ যানের কারণে। তাই চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়ে স্বচ্ছতা জরুরি। সেই সঙ্গে সব অনুমোদনহীন যান অপসারণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, চোরকে দিয়ে চোর ধরা যায়। কিন্তু চোর নির্মূল করতে প্রয়োজন সৎ ও দক্ষ লোক। এজন্য জনবলকে সৎ ও দক্ষ হতে হবে। যেখানে ঘাটতি অনেক। কখনো দুর্ঘটনার কবলে পড়লে তখন করণীয় কী, তা যাত্রীদের বেশির ভাগই জানেন না। যাত্রার শুরুতেই যাত্রীদের অবহিত করানো উচিত। যা কখনোই হয় না। অনেক সময় প্রয়োজনীয় সবকিছু থাকলেও দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার হওয়ার উপায় না জানার কারণে সব বিফলে যায়।

অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। এ ক্ষেত্রে যাত্রীদের দোষও কোনো অংশে কম নয়। বিশেষ করে ঈদ-পূজার সময় যাত্রীদের চাপ বেশি থাকে। এ সময় অতিরিক্ত যাত্রী বহনের প্রবণতা বেশি। তাই যাত্রীদের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষকেও এ ব্যাপারে সচেতনভাবে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসা উচিত। কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ সাবিত আল হাসানকে পিষ্ট করে এস কে এল থ্রি নামক কার্গোজাহাজ। এই কার্গোজাহাজের ছিল না কোনো অনুমোদন। এ রকম অনুমোদনহীন সব যান অপসারণ না করলে দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো সম্ভব না। সর্বশেষ ঘটে যাওয়া মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মার পুরাতন কাঁঠালবাড়ী ঘাটের কাছে নোঙর করে রাখা বালুবোঝাই বাল্কহেডে যাত্রীবাহী স্পিডবোটের ধাক্কায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছে। একটি স্পিডবোডের যাত্রী ধারণক্ষমতা ১০ জন হলেও সেটিতে ৩৬ জন যাত্রী ছিল। এভাবে সবার চোখের সামনেই চলছে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পরিসংখ্যান মতে, ২০২০ সালে নৌপথে ছোট-বড় ৭০টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারায় ২১২ জন। আহত ও নিখোঁজ হয় আরো অত্যন্ত ১০০ জন। নিঃসন্দেহে এ পরিসংখ্যান আমাদের জন্য অশনিসংকেত। আমরা এই অশনিসংকেত বহনে আগ্রহী নই। আমরা এখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। কোনো হৃদয়বিদারক ঘটনার মুখোমুখি হতে চাই না। কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপনে এগিয়ে আসবে, এটুকুই প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নৌপথ,নিরাপত্তা,সম্পাদকীয়,দুর্ঘটনা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close