সম্পাদকীয়

  ১৬ এপ্রিল, ২০২১

সর্বাত্মক লকডাউন শুরু, শেষটা কোথায়

আতঙ্ক সরেনি, কিন্তু আতঙ্কের চেয়ে এ দেশের মানুষ ঘরে ফিরতেই বেশি ভালোবাসে। আট দিনের জন্য শুরু হয়েছে সর্বাত্মক লকডাউন। সামনে ঈদ। সেখানেও ছুটি। মাঝের কয়টা দিন লকডাউনের আওতায় ফেলতে পারলে সোনায়-সোহাগা। টানা একটি মাস। আর সে কারণেই যেন ঘরমুখো মানুষের স্রোত। সবাই ছুটছে। সামনে-পেছনে তাকানোর সময় নেই। কী নিয়ে ছুটছে; ভেবে দেখার সময়টাও নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। আগেও কখনো দেখা যায়নি। এভাবেই তারা করোনা মহামারিকে মোকাবিলা করেছে। এবারও সেভাবেই পার করার পরিকল্পনা হয়তোবা তাদের। তাই কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা না করে নিজের অজ্ঞাতেই করোনা মহামারিকে কাঁধে নিয়ে ঘরমুখো ছুটছে মানুষ।

দীর্ঘ ছুটির ঘোষণায় কয়েক দিন ধরে ঢাকা ছেড়েছে কর্মহীন ও নিম্ন আয়ের হাজারো মানুষ। গত মঙ্গলবার একই পথে নেমেছিল ঘরমুখো মানুষের স্রোত। দিনটি ছিল ৯ দিনের চলে আসা নিষেধাজ্ঞার শেষ দিন। চলেনি দূরপাল্লার কোনো যানবাহন। ভেঙে ভেঙে চলতে হয়েছে পথ। সবাইকে খুঁজতে হয়েছে বিকল্প বাহন। পদে পদে নানা দুর্ভোগের শিকার হয়েছে তারা। সর্বাত্মক এই লকডাউন গতকাল ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়েছে, চলবে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত। এ আট দিন গণপরিবহন বাস, ট্রেন, লঞ্চ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে। সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। তবে ব্যাংকসমূহকে বন্ধের আওতায় এনেও পরে তা খুলে দেওয়া হয়েছে।

টানা তিন দিন দৈনিক ৭০ জনের অধিক মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৯৪। গত সোমবার রেকর্ড ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। শেষ ২৪ ঘণ্টায় ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে মোট শনাক্ত ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৫। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালে বেড খালি নেই। নতুন কোনো রোগীকে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তখন চোখের সামনে অনেক মৃত্যু দেখতে হবে আমাদের। তাদের মতে, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখীর সময়ে দেশগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। রাষ্ট্রীয় শক্তিশালী কাঠামো থাকায় তারা পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছে। কিন্তু আমরাও যদি সে অবস্থায় পৌঁছাতে বাধ্য হই, তখন!

বিশেষজ্ঞরা আরো বলেছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে লকডাউন একটি সহজ উপায়, এ কথা সত্য। কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ক্ষতির পরিমাণ কম নয়। ক্ষেত্রবিশেষ করোনার চেয়ে বেশি। একমাত্র লকডাউনের কারণেই দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে, যদি তা দীর্ঘস্থায়ী লকডাইনে পরিণত হয়। পরিস্থিতি কি সেদিকেই যাচ্ছে! যে পরিমাণ মানুষ ঢাকা ছেড়েছে, যেভাবে ছেড়েছে, তাতে শঙ্কাই বেড়েছে। এদের কেউই কোনো স্বাস্থ্যবিধির ধার-ধারেননি। পদে পদে লঙ্ঘিত হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। গ্রামে পৌঁছে এরা কতটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, তাও কারো জানা নেই। আর এসব বাস্তবতা সামনে রেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে মানুষ যদি নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে আন্তরিক হয়, তাহলেই সম্ভব। আমরা মনে করি এবং পাশাপাশি বিশ্বাস করতে চাই, আমাদের সাবধানতা এবং সচেতনতাই আমাদের রক্ষা করবে। এই প্রতিরোধের মহানায়ক হবেন ১৭ কোটি মানুষের নান্দনিক বোধ এবং ঐক্যবদ্ধ চিন্তা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মুক্তমত,সম্পাদকীয়,সংক্রমণ,লকডাউন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close