সম্পাদকীয়

  ১২ এপ্রিল, ২০২১

চাপের মুখে অর্থনীতি, সতর্কতা জরুরি

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক ভাইরাসের কাছে সভ্যতা আজ পরাজিত। প্রথম দফা কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় দফায় হামলে পড়েছে করোনাভাইরাস। তীব্রতার মাত্রাও বেশি। আবারও স্থবিরতার পথে চলেছে বিশ্ব। শঙ্কাও বাড়ছে। এক কথায় বলতে গেলে আমরা এক প্রলয়ঙ্কর যুদ্ধের মাঝে অবস্থান করছি। এর শেষ কোথায়? আমরা জানি না। শুধু এটুকু জানি, যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে হবে। প্রাণহানির সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। বাড়ছে সংক্রমণও। এখানেই শেষ নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য সংকুচিত হওয়ায় চাপের মুখে পড়েছে অর্থনীতি। বাংলাদেশও এর বাইরে থাকতে পারেনি। তবে করোনার প্রথম ধাক্কা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছিল রপ্তানি খাত ও রেমিট্যান্স। চরম প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও দেশে টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসী কর্মীরা। তাদের পাঠানো টাকায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার হয়েছে। একই সঙ্গে নানা সংকটের মধ্যেও পোশাককর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েও লড়াই করেছেন। রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে তারা বড় ধাক্কা লাগতে দেননি।

কিন্তু এবার? দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবিলার কী হবে? নিশ্চয়ই আগাম পরিকল্পনা আছে সরকারের। কেবল সংক্রমণ ও মৃত্যু প্রতিরোধের কথা ভাবলেই চলবে না। খাওয়া-পরার নিশ্চয়তার পথকেও উন্মুক্ত রাখতে হবে। মুখে বলে দেওয়া সহজ হলেও করাটা খুবই কঠিন। সরকারের একার পক্ষে সামাল দেওয়া পায় অসম্ভব, এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়। চাই সর্বসাধারণের শতভাগ সহায়তা। সংক্রমণ রোধে দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার মধ্যেই রয়েছে এ যুদ্ধে আমাদের সফলতা। মনে রাখতে হবে, সামনের দিনগুলো আমাদের জন্য শুভ নয়। অনেকটাই কণ্টকাকীর্ণ। করোনা সংক্রমণ দ্রুত কমিয়ে আনতে না পারলে অর্থনীতির ওপর যে চাপ পড়বে, তা কারো জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না।

আবারও কঠোর লকডাউনের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে সরকারকে উভয় দিকের কথা ভাবতে হচ্ছে এবং তারা তা ভাবছেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। জীবন-জীবিকার সমন্বয় ও স্বাস্থবিধি মেনে ব্যবসায়িক কর্মকান্ড চালু রাখার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করছেন অর্থনীতিবিদরা। এক বছর ধরে করোনা মহামারির মধ্যে প্রবাসী আয়ে একের পর এক রেকর্ড হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসেই সাড়ে ১৮ মিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছরে দেশে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এর আগে এক বছরে বাংলাদেশে এত রেমিট্যান্স আর কখনো আসেনি। আর এই রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবার ৪৪ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। এত গেল পেছনের পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র। এখন আমাদের আসছে দিনের কথা ভাবতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের পাশাপাশি এখন রাজস্ব ও বিনিয়োগ বাড়ানোই বড় চ্যালেঞ্জ। যদি লকডাউন হয়, স্বল্প আয়ের মানুষের জীবিকা হুমকিতে পড়বে। করোনার প্রথম ধাক্কা এখনো কাটেনি। এর মাঝেই চলে এলো দ্বিতীয় ধাক্কা এবং তা গতবারের চেয়ে ভয়ংকর। প্রথম ধাক্কায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনে যে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, তা এখনো সরেনি। দ্বিতীয় ধাক্কা কীভাবে সামাল দেবে, এটা কেবল সময়ই বলতে পারে। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তাও কারো জানা নেই। আমরা মনে করি, বিচক্ষণতাই ভরসা। বিচক্ষণ হতে হবে সরকারকে, পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও। মনে রাখতে হবে, বিন্দু পরিমাণ অবহেলা দেশ-জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য ডেকে আনতে পারে এক প্রলয়ঙ্করী সংকট; যা কখনোই আমাদের কাম্য হতে পারে না।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মুক্তমত,লকডাউন,করোনাভাইরাস,সম্পাদকীয়,অর্থনীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close