সম্পাদকীয়

  ১১ এপ্রিল, ২০২১

সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় মনোযোগ কৃষককেই দিতে হবে

‘কৃষক না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না’ বাক্যটি প্রতিনিয়তই শুনছি। বলছেন রাজনীতিকরা, পন্ডিতরা, সংস্কৃতির ধারক-বাহকরা, সমাজপতিরা। কেবল বলছে না বাস্তব চিত্র। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, খেয়ে না খেয়ে দেশের ১৭ কোটি মানুষের মুখে যারা দৈনন্দিন খাবার তুলে দিচ্ছেন তাদের জীবনযাপনে তেমন একটা পরিবর্তন নেই। অভাব যেন তাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে আছে। বিষয়টি নতুন কিছু নয়। অনেক পুরোনো। বছরের পর বছর ধরেই চলে আসছে এ ধারা। আমরা ব্রিটিশ শাসন দেখেছি, পাকিস্তানের শোষণ ও নিপীড়ন দেখেছি, এখনো দেখছি। অবস্থা দাঁড়িয়ে আছে একই তিমিরে। কোনো পরিবর্তন নেই। কৃষকরা যেমন ছিলেন, তেমনিই আছেন। তবে এমন তো কথা ছিল না। পাকিস্তানি শোষণ ও নিপীড়ন থেকে বেরিয়ে আসার পেছনে সবচেয়ে বড় যে কারণটি ছিল তা হলো সামাজিক বৈষম্যের অবসান। কিন্তু সে বৈষম্যের অবসান হয়নি। অনেকের মতে, ক্ষেত্রবিশেষ তা বেড়েছে। অন্তত কৃষকদের দিকে তাকালে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

প্রতিনিয়তই কৃষক সমাজ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানাবিধ বিপর্যয় মোকাবিলা করে টিকে আছেন। টিকে থাকতে হচ্ছে। তাদের জন্য দ্বিতীয় কোনো স্থায়ী সমাধানের পথ খোলা নেই। যদিও সরকার নানাবিধ সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। তাতে কিছুটা হলেও অস্থায়ীভাবে সমাধান হলেও হয়নি বৈষমের অবসান। একদিকে করোনা মহামারির তান্ডব, পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অনেকটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা এর মতো কৃষকরা আজ দিশাহারা। দেশের বিভিন্ন স্থানে গত ৪ এপ্রিল রাতে গরম বাতাসে কৃষকের আবাদ করা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধানের শীষ শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে। গরম বাতাসে ধানগাছ পুড়ে ধূসর রং ধারণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান।

এসব কৃষকের চাহিদাও অন্যদের মতো নয়। খেতে-পরতে পারলেই তারা খুশি। আর এজন্যই তারা খেয়ে না খেয়ে, ধারদেনা করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলান। সম্ভাব্য ফসলের ওপর নির্ভর করেই বেড়ে ওঠে তাদের স্বপ্ন। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে তাদের সেই স্বপ্নের অপমৃত্যু হয়েছে। তথ্য মতে, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, বরিশাল ও গাইবান্ধাসহ বেশ কয়েকটি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই দাবদাহে কমপক্ষে ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া জমির পরিমাণ আরো কয়েকগুণ বেশি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, যেসব কৃষকের ধান পুড়ে গেছে, তাদের মুখোমুখি হওয়াটা অনেক কষ্টের। তাদের দেখলে কোনো হৃদয়বান ব্যক্তির চোখের পানি ধরে রাখা সম্ভব নয়। এ যেন সন্তান হারানোর শোকের চেয়েও অনেক বেদনাদায়ক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব ধানখেতে ফুল আসতে শুরু করেছে, সেখান দিয়েই বাতাস বয়ে গেছে। ফলে ফুলের রেণুটা পুড়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে পরাগায়ন আর হবে না। ধানের অকাল মৃত্যু ঘটবে।

অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমরা মনে করি, সাময়িক এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়; তবে সমাধান নয়। প্রায়শই কৃষকদের এমন দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়। আগামীতে হবে। আমরা একটি স্থায়ী সমাধানের পক্ষে। আর সেজন্য দরকার বৈষম্যের মাত্রা কমিয়ে আনা। পণ্য বিক্রয়ের একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাই তাদের বৈষম্যের কশাঘাত থেকে মুক্তি দিতে পারে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মুক্তমত,সম্পাদকীয়,কৃষক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close