সম্পাদকীয়

  ০৮ এপ্রিল, ২০২১

কোভিড মোকাবিলায় চাই সঠিক পদক্ষেপ

আমরা এতকাল দেখেছি পরাশক্তিধর দেশগুলোর দাম্ভিক আচরণ। আর এখন দেখছি করোনাভাইরাসের দাম্ভিকতা। তবে প্রকৃতির কাছে মানুষ যে কতটা অসহায়, এবার বিশ্ববাসী তার প্রমাণ পেয়েছে। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনো পরাশক্তিই টিকে থাকতে পারছে না। কোনো আণবিক বোমা দিয়েও তাদের ধ্বংস করা সম্ভব হচ্ছে না। খোদ আমেরিকায়ই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যেখানে হামলা করেনি করোনাভাইরাস। মৃত্যুর ঘটনা নেই এমন একটি রাষ্ট্রকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভাইরাস এখনো সরব। বলা যায়, আগের চেয়ে আরো বেশি ভয়ংকর।

আমরাও এর বাইরে থাকতে পারিনি। আক্রান্ত হয়েছি। মোকাবিলা করেই বেঁচে আছি। মোকাবিলার অন্যতম যোদ্ধা রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষগুলো। প্রকৃতিই তাদের অন্যতম প্রধান সহায়ক। প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতাই তাদের রক্ষা করেছে। যেসব মানবদেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তারাই আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা যাচ্ছেন। সুতরাং করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এ সময়ের অন্যতম হাতিয়ার অ্যামিউনিটি বাড়ানো এবং সুরক্ষা। এখানে সফলতা এলে করোনার সঙ্গে যুদ্ধে আমরা পরাজিত হব না। মনে রাখতে হবে, ভাইরাস প্রতিরোধে নির্দিষ্ট এবং চূড়ান্ত কোনো ব্যবস্থা বিজ্ঞান এখনো দিতে পারেনি। টিকা এসেছে। তবে তা এখনো সার্বজনীন হতে পারেনি এবং বিজ্ঞান বলছে, এটিও নির্দিষ্ট ব্যবস্থা নয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ব্যবহৃত হচ্ছে প্রতিষেধক হিসেবে। অনেকাংশে সফল হিসেবে মেনে নিয়েছে বিশ্ব। টিকা কার্যক্রম চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকাই শেষ সমাধান নয়। সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাটাই সর্বোত্তম পন্থা।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে গত সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য দেশজুড়ে এক ধরনের লকডাউন চলছে। সরকারি বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনেই দেশে মৃত্যু ও শনাক্তের ক্ষেত্রে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এক দিনে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু (৬৬ জনের) হয়েছে। সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ২১৩ জনের। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংক্রমণ আরো দুই সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। আমরা মনে করি, আগামী দুই সপ্তাহ দেশের প্রতিটি নাগরিককে নিজ দায়িত্বে নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করার কাজে এগিয়ে আসতে হবে। শত্রু হিসেবে করোনাভাইরাস বেছে বেছে কাউকে আক্রমণ করবে না। আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু দেশের প্রতিটি মানুষ। সুতরাং মানুষকেই তার নিজের স্বার্থে এগিয়ে আসতে হবে। কারো ওপর দায়ভার ছেড়ে দেওয়াটাই হবে আত্মঘাতী।

দেশে দীর্ঘদিন পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকার পর গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দ্রুত সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায়নি। তাদের উদাসীনতাই আজকের এই পরিণতির জন্য অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছেন অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বলেছেন, করোনা মোকাবিলায় সরকারি নির্দেশনাগুলো না মানলে সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে। মন্ত্রী মিথ্যা বলেননি। মনে রাখতে হবে, নির্দেশনা মেনে চললে সর্বপ্রথম উপকৃত হবেন তিনিই, যিনি মানবেন। তারপর..., পরিবার এবং রাষ্ট্র। তাই নিজেকে এবং পরিবারকে বাঁচাতে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দিকে এগিয়ে যাই।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কোভিড,সম্পাদকীয়,সংক্রমণ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close