সম্পাদকীয়
প্রেরণায় সদা জাগ্রত তুমি
বাঙালি ও বাংলাদেশ শব্দ দুটি উচ্চারণ করতে গেলে অবধারিতভাবেই উচ্চারিত হয় বাংলার স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামটি। এ দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাসে ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করা এক নক্ষত্র বঙ্গবন্ধু।
সারা জীবন তিনি লড়াই করে গেছেন বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য, বাংলার মানুষের অধিকারের জন্য। ইংরেজদের হাত থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য ভারতের জনগণ যখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছিল, তখন থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের লড়াই শুরু। সে সময়ই তিনি স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। এরপর পাকিস্তান রাষ্ট্র গড়ে ওঠার পরপরই বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ওপর বিমাতাসুলভ আচরণ করতে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইংরেজমুক্ত যে স্বাধীন দেশ দেখতে চেয়েছিলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরই তার অন্তসারশূন্যতা উপলব্ধি করলেন। ফলে ক্রমেই তিনি বাঙালিদের নতুন করে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করতে থাকেন। ২৩ বছরের গোলামির শৃঙ্খল ভেঙে যার একটি ডাকেই ঘরে ঘরে গড়ে দুর্গ গড়ে ওঠে। যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। আমরা পাই একটি রাষ্ট্র, পতাকা এবং একজন নেতা। যিনি আর কেউ নন আমাদের প্রাণপ্রিয় বন্ধু ‘শেখ মুজিবুর’। নামটি আজ শুধুই একটি নাম নয়, জলজ্যান্ত একটি ইতিহাস।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন পরাধীন বাংলার রাজনৈতিক আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশ্বনন্দিত নেতা। তার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, তিনি একদিকে যেমন ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও পরিশ্রমী এবং অন্যদিকে অন্যায়ের প্রতি আপসহীন কঠিন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সারা জীবন তিনি ন্যায়ের জন্য লড়েছেন, অন্যায়ের কাছে কোনো দিন মাথা নত করেননি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি বারংবার কারাবরণ করেছেন। জীবনের বেশির ভাগ সময় দীর্ঘ ১৪ বছর তিনি কাটিয়েছেন কারাগারের চার দেয়ালের মাঝে। তবু অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার কণ্ঠ রোধ করা যায়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন একজন নেতা, যার সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসের সম্পর্ক গভীর। ঘাতকের বুলেট তাকে হত্যা করলেও সে সম্পর্ক মোটেই ছিন্ন করতে পারেনি। যত দিন যাচ্ছে, ততই ইতিহাসের পাতায় তার নাম সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
বাঙালির চিন্তার জগতে, ভাবনার ভুবনে, মেধার উৎকর্ষে কিংবা ভরসার আশ্রয়স্থল হিসেবে সবস্থানে খুঁজে পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর বিশাল ব্যক্তিত্বকে। তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি যেন এক অপার সাহসিকতার মূর্ত প্রতীক। ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, তিতুমীর, সুভাষ বোস, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানীর মতো সাহসী নেতৃত্বের নির্যাস তিনি নিজের মধ্যে ধারণ করতেন। কিউবার অবিসংবাদিত বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ট্রো বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, শেখ মুজিবকে দেখেছি।’
জাতির পিতার বজ্রকঠিন ব্যক্তিত্ব আমাদের জন্য শিক্ষা রেখে গেছে। বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়ে গেছেন, কীভাবে ঝড় ও ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পথে মাথা উঁচু করে সামনের দিকে এগিয়ে চলতে হয়, অধিকার আদায় করে নিতে হয়, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হয়। আমাদের চলার পথ কখনোই মসৃণ নয়। পথ যতই বন্ধুর হোক না কেন, হৃদয়ে যদি থাকে দেশপ্রেম আর চিত্তে থাকে সাহস, তাহলে দেশের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া যায়। এ শিক্ষাকে ধারণ করে তাই তারুণ্যের চেতনায় ও অনুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধু যুগে যুগে আদর্শ, ন্যায়পরায়ণতা, সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়েই থাকবেন।
পিডিএসও/হেলাল