সম্পাদকীয়

  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

অসাধারণ অর্জনে বাংলাদেশ

এক কথায় অসাধারণ অর্জন। জাতি হিসেবে আমাদের জন্য আনন্দ ও গৌরবের। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। ওই বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এই চূড়ান্ত স্বীকৃতি মিলবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতিসংঘের সিডিপির তিনটি শর্তই পূরণ করেছে বাংলাদেশ এবং তা বেশ দক্ষতার সঙ্গেই। করোনাভাইরাসের ঝড়ঝাপটা পেরিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। নিজস্ব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ২০২৬ সালের পর বাণিজ্য সুবিধা থাকবে না। কিন্তু এর মধ্যেই আমাদের বর্তমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, কর্মসংস্থানমূলক শিল্পায়ন, রপ্তানি বহুমুখীকরণ করা দরকার।

আমরা মনে করি, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা অসাধ্য নয়। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্প শেষ করে দেখিয়েছি—‘আমরাও পারি’। এ ছাড়া রয়েছে অসংখ্য অর্জন। যে অর্জনগুলো মূল্যায়িত হয়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ।

স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের অবস্থা আজকের মতো ছিল না। অবস্থা ছিল অনেকটা ভঙ্গুর। আর সে অবস্থায় অনেকের বিদ্রপাত্মক কথা আমাদের হজম করতে হয়েছে। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, ‘স্বাধীন হলে তোমরা খাবে কী? তোমাদের আছে পাট, চা ও চামড়া। এ দিয়ে তোমাদের সংসার চলবে না। ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত হবে।’ তাদের সেই বিদ্রপাত্মক মন্তব্য আজ আঁস্তাকুড়ে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যায়িত করা কিসিঞ্জারের দাম্ভিক বক্তব্যকে মিথ্যা ও অসাড় প্রমাণ করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্টে পলিসির (সিডিপি) সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদ- পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। গত ২২ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া সিডিপির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় তাদের তিনটি শর্ত পূরণ করে চূড়ান্ত সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। আমরা প্রি-টেস্ট ও টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। এবার ফাইনাল। ফাইনাল পরীক্ষার মধ্যে আমরা তৈরি হওয়ার জন্য পাঁচ বছর সময় পাব। নিশ্চয়ই এ সময়ের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে এবং আমরা ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হব।

দেশের বিদগ্ধজনরা বলছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এক দিন বাংলাদেশ উন্নয়ন বিশ্ব দেখবে’। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজ তাই হচ্ছে। এলডিসির প্রথম মূল্যায়নে আমরা উত্তরণ ঘটিয়েছি। পরবর্তী মূল্যায়নও ইতিবাচক হবে। ২০২৪ সালে চূড়ান্ত পর্যায়েও আমরা উত্তীর্ণ হব। আর সে কারণে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আমাদের অনেক সুবিধা কমে যাবে, যা আমরা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে পেয়ে আসছি। এজন্য বাংলাদেশ প্রস্তুতির জন্য সময় নিয়েছে। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক।

সবচেয়ে বড় কথা, আমরা আইডিএর সদস্য হয়েছি। কারো দান নিতে চাই না। কারণ আমাদের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তা অনেক গুণ বেড়েছে। আগামীতে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করা, মানসম্পন্ন উৎপাদনের দিকে এগিয়ে যাওয়া এবং কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করা। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তা পারবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাংলাদেশ,অর্জন,সম্পাদকীয়,উন্নয়ন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close