মো. রাশেদ আহমেদ

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

জো বাইডেন প্রশাসনের বৈদেশিক চ্যালেঞ্জ

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র তথা হার্ডপাওয়ার নামে খ্যাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের পথচলা শুরু হয়েছে গত ২০ জানুয়ারি। নানা ধরনের বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে তিনি হোয়াইট হাউসের সর্বোচ্চ চালিকাশক্তিতে অধিষ্ঠিত হলেন। বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বর্তমানে অত্যন্ত কঠিন সময়ে জো বাইডেন প্রশাসন পুরোনো মার্কিনদের নতুন দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন। এরই মধ্যে তিনি নতুন প্রশাসন অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকে শুরু করে বৈদেশিক নীতি স্পষ্ট করতে শুরু করেছেন। বাইডেন প্রশাসনের উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক নীতির চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে আসা ও কার্যকর ভূমিকা পালন করা, ইরানের (৫+১) পারমাণবিক চুক্তিতে প্রত্যাবর্তন ও রাশিয়ার সঙ্গে ওঘঋ চুক্তি পুনর্বহাল, ইয়েমেন যুদ্ধ অবসান পদক্ষেপ গ্রহণ, মধ্যপ্রাচ্য ও ফিলিস্তিন ইস্যু। এ ছাড়া বিশ্বে গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করা, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের পুনরুদ্ধার করাসহ অসংখ্য চ্যালেঞ্জ মোকাফবলা করতে হবে তাকে। এসব চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মাধ্যমে জো বাইডেন বাইডেন প্রশাসন আবার ওয়াশিংটনকে বিশ্বরাজনীতির মঞ্চে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে যে মরিয়া থাকবে, সে কথা অনুমেয়।

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে গুরুতর সমস্যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, করোনাভাইরাসের চেয়ে অতিশয় মারাত্মক প্রভাব জলবায়ু পরিবর্তন। যার রেশ বহন করতে হবে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম পর্যন্ত। তবে আশার আলো হচ্ছে, জো বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর পরিবেশ রক্ষায় তিনটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে আসা। এরই মধ্যে বাইডেন প্রশাসনের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অভিজ্ঞ কূটনীতিক জন কেরি। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন ত্যাগ করে শিল্প উন্নত দেশগুলো। অতি সাম্প্রতিক ইউরোপীয় কমিশনের জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টার ও প্রিবিএলম নেদারল্যান্ডস এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট এজেন্সির যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে যে, বৈশ্বিক বড় দুই অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সম্মিলিতভাবে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসারণের জন্য ৪০ শতাংশ দায়ী। একই সঙ্গে কার্বন নিঃসরণে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি এশিয়া ও ইউরোপের বড় অর্থনীতির দেশগুলো সবচেয়ে এগিয়ে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করে চীন। দেশটি প্রতি বছর ১১ হাজার ২৫৬ মেগা টন (প্রতি মেগা টনে ১০ লাখ টন) কার্বন নিংসরণ করে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র দেশটির কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বছরে ৫ হাজার ২৭৫ মেগা টন। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো সম্মিলিতভাবে ৩ হাজার ৪৫৭ মেগা টন কার্বন নিঃসরণ করে। এরপরই ভারত দেশটির কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বছরে ২ হাজার ৬২২ মেগা টন। রাশিয়া ও জাপান প্রতি বছর যথাক্রমে ১ হাজার ৭৪৮ মেগা টন ও ১ হাজার ১৯৯ মেগা টন কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর তালিকায়। এরপর রয়েছে যথাক্রমে জার্মানি ৭৫৩ মেগা টন, ইরান ৭২৮, দক্ষিণ কোরিয়া ৬৯৫, সৌদি আরব ৬২৫, কানাডা ৫৯৪ ও ইন্দোনেশিয়া ৫৫৮ মেগা টন। ২০১৯ সালে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাণী ও উদ্ভিদ ১ মিলিয়ন প্রজাতি বিলুপ্তির পথে।

তথ্য মতে, ২০১৫-১৯ সময়সীমায় কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়েছে ২০ ভাগ। ১৯৯৩ সাল থেকে যেখানে সাগরের জলসীমার উচ্চতা বেড়েছে গড়ে ৩.২ মিলিমিটার আর শুধু ২০১৫-১৯ অল্প সময়সীমায় গড় উচ্চতা বেড়েছে ৫ মিলিমিটার। যা খুবই উদ্বেগজনক। জাতিসংঘের তথ্যমতে, আগামী ৫০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩ ফুট বাড়লে তাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ১৭ শতাংশ পানির নিচে চলে যাবে। এতে আনুমানিক ৩ কোটি মানুষ বাস্তুহারা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের এক সমীক্ষায় জানা যায় যে, বর্তমান উষ্ণায়নের ধারা ২০৫০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে দক্ষিণ এশিয়ার উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। এতে এশিয়ার ১৫০ কোটির বেশি মানুষের খাদ্য এবং পানি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। জলবায়ু প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী বৈশ্বিক মাত্রা ২ ডিগ্রি হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জো বাইডেন প্রশাসনের জন্য এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। কার্যত এ বছরের শেষ প্রান্তে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। যা আগামীর বিশ্বকে বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শেষ সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি।

জো বাইডেনের নির্বাচনী অঙ্গীকার অনুযায়ী, ২০১৫ সালে করা ওবামা শাসনকালে ইরানের সঙ্গে (৫+১) পারমাণবিক চুক্তিতে পুনরায় ফিরতে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে ওয়াশিংটন। উল্লেখ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসীন হয়ে ২০১৮ সালের মে মাসে এককভাবে এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। অর্পিত করে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। এরই মধ্যে তেহরান ২০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করেছে বলে তথ্য প্রকাশ করে জাতিসংঘের আণবিক সংস্থা; যা এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্রদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে নব মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিনকেন বলেন, ইরান খুব অল্প সময়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হবে। এখন তেহরান এবং ওয়াশিংটন পারমাণবিক আলোচনা নিয়ে সাপ-ইঁদুরের ঠান্ডা লড়াই চলছে। তেহরান অবৈধ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ছাড়া আলোচনায় বসতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েল ও সৌদি জোট ইরান ইস্যু নিয়ে তুষ্ট রাখাও ওয়াশিংটনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। ২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ নিষেধাজ্ঞার ফলে তেহরানের লোকসানের পরিমাণ ১৫০ বিলিয়ন ডলার। সন্দেহ নেই যে, দেশটি এখন অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে। কিন্তু তারপর দেশটি কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মাথা নত করবে না। তাদের রয়েছে বিপ্লবী শক্তি, হার না মানার গল্প। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত, পুনরায় তেহরানকে চুক্তিতে ফেরানো ছাড়া ওয়াশিংটনের হাতে বিকল্প কোনো রাস্তা নেই।

অপরদিকে, বিশ্বে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায় পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তি পুনর্বহাল বিষয়ে দরকষাকষি করতে হবে জো বাইডেন প্রশাসনকে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া চুক্তির শর্ত মানছেন না—এমন অজুহাতে চুক্তি থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৮৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনের ডিসিতে রোনাল্ড রিগান এবং মিখাইল গর্ভাচেভের মধ্যে উক্ত চুক্তিটি সম্পাদন হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল সব পারমাণবিক ও প্রচলিত ভূমি থেকে নিক্ষেপিত ক্ষেপণাস্ত্র এবং ক্রজ মিসাইল ৫০০ থেকে ৫৫০০ কিলোমিটার হতে সরিয়ে ফেলা। কার্যত এর ফলে দেশ দুটির মাঝে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছিল। স্মরণযোগ্য যে, বিশ্বে প্রথম পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান বিশ্বে যত পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ আছে এর ৯০ শতাংশের বেশি বিদ্যমান দেশ দুটির মাঝে। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা যায়, আগামীর বিশ্বকে পারমাণবিক ভয়াল অস্ত্র প্রতিযোগিতা হতে রক্ষার জন্য সংকোচহীনভাবে যুক্তরাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে।

যুদ্ধ কখনো বিশ্বের বুকে শান্তি বার্তা প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। বরং নিশ্চিতভাবে কেড়ে নেই অজস্র তাজা প্রাণ। গৃহহীন করে লাখ লাখ মানুষকে। বর্তমান ইয়েমেন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলমান। ২০১১ সালে আরব বসন্তের টেড উচড়ে পড়ে ইয়েমেনও। এতে ক্ষমতাচ্যুত হয় দীর্ঘদিনের শাসক আলী আবদুল্লাহ এবং নতুন দায়িত্ব নেন আব্দু রাব্বু মানসুর হাদী। ফলে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক সংকট; যা পরবর্তী গৃহযুদ্ধ রূপ নেই। ২০১৫ সাল থেকে ইয়েমেন যুদ্ধে নগ্ন হস্তক্ষেপ করে সৌদি জোট; যা এখনো বিদ্যমান। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে ইয়েমেন যুদ্ধে এ পর্যন্ত ২ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জরুরিভিত্তিতে সহায়তা দরকার। এ যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়েছে দেশটির অবকাঠামো। লাখ লাখ শিশু খাদ্য এবং পুষ্টির অভাবে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। তবে আশার আলো হচ্ছে, জো বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্পের আমলে সৌদি জোটের কাছে ২৩৩০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করেছে। ইতালি স্থায়ীভাবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব-আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাছাড়া বাইডেন প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন; যা অস্ত্র বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রথম পদক্ষেপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতির মঞ্চে মধ্যপ্রাচ্য ও ফিলিস্তিন ইস্যু বরাবরই অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। অনেক বিশ্লেষক মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিকে তেলের রাজনীতি হিসেবে অভিহিত করেন। এরই মধ্যে জো বাইডেন মধ্যপ্রাচ্যের সমন্বয়ক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ব্রেড মেকারকে। জো বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্পের করা অনুকরণীয় মধ্যপ্রাচ্যের নীতি খুব বেশি পরিবর্তন করবেন বলে আশা করা যায় না। তবে তিনি সৌদি আরবকে আগের মতো এত বেশি অকুণ্ঠিত সমর্থন দেবেন না। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের প্রতি খানিকটা কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করতে পারে জো বাইডেন প্রশাসন। কিন্তু দেশটির ক্ষেত্রে নীতিগত কোনো পরিবর্তন আসবে না, সে কথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ১৯৪৮ সালে ১৪ মে মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনিদের ভূমিতে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিনরা অসহনীয় নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করে আসছে। এ দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় বিশ্বের বুকে অগণিত পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করেছে অসংখ্য দেশ। অথচ ফিলিস্তিনবাসীর ভাগ্যের কোনো বিবর্তন হয়নি। বরং বিদায়ী ট্রাম্প ২০১৭ সালে জেরুজালেমকে এককভাবে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে জেরুজালেমকে রাজধানী করার বিল পাস করা হয়। এরই মধ্যে জো বাইডেন প্রশাসন ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বিপক্ষীয় স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা ভাবছে; যা ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ফিলিস্তিনবাসী। তবে এ ক্ষেত্রে কঠিন সমীকরণ মেলাতে হবে। ফিলিস্তিনের সঙ্গে পুনরায় কূটনীতিক সম্পর্ক চালুর ঘোষণা দিয়েছেন জো বাইডেন। সেই সঙ্গে ট্রাম্পের রিফিউজি তহবিল বন্ধ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবেন; যা সমসাময়িক ইতিবাচক দিক। তবে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনবাসীর স্বাধীন রাষ্ট্রের কোনো বিকল্প পথ নেই। কার্যত, নিকট ভবিষ্যতে সময় বলে দেবে মধ্যপ্রাচ্যে কতটুকু শান্তির বাতাস প্রবাহিত করবে পারবে জো বাইডেন প্রশাসন! বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন প্রভাব ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে ওয়াশিংটনের। মধ্যপ্রাচ্যে তাদের নিজেদের সৈন্যবাহিনী এখন অরক্ষিত এবং প্রায় হামলার শিকার হচ্ছে। গত বছর ইরাকের পার্লামেন্টে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের বিল পাস করে। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, ইরাকে অবৈধভাবে সেনা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। জো বাইডেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে সেনা প্রত্যাহারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। মোদ্দাকথা, ওয়াশিংটন এখন মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন খেলোয়াড় হিসেবে প্রস্তুত করছে ইসরায়েলকে। সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বেশ কিছু মুসলিম দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি প্রদান, যার অংশবিশেষ মাত্র।

কার্যত বাইডেন প্রশাসনের জন্য নিজ দেশের অভ্যন্তরীণ পদক্ষেপের চেয়ে বৈদেশিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অনেক সহজ হবে বলে আশা করা যায়। ওয়াশিংটন হয়তো পুরাতন নীতির মতো নতুন করে কোনো যুদ্ধ অথবা সহিংসতা উসকে দেবে না অথবা বিরত থাকবে। বিশ্বে আবারও গণতন্ত্রের গালভরা স্লোগান অথবা নতুন কোনো বাণী (ট্যাগ) নিয়ে আবির্ভাব হবে। বর্তমানে বিবদমান ইস্যু সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে বিশ্বরাজনীতির মঞ্চে আবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে মরিয়া হয়ে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, নতুন পরাশক্তির যুগে যুক্তরাষ্ট্রকে পুরাতন জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ সহজ হবে না। তবে জো বাইডেন প্রশাসন যদি বিশ্বে যুদ্ধ বন্ধের কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে নিঃসন্দেহে তা হবে বড় সফলতার অংশ। নিকট ভবিষ্যতে সময় বলে দেবে জো বাইডেন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কতটা ছড়ি ঘোরাতে সক্ষম হবেন!

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চ্যালেঞ্জ,জো বাইডেন,যুক্তরাষ্ট্র,মুক্তমত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close