সম্পাদকীয়

  ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

নিরাপদ হোক সাইবার জগৎ

ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল যুগের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে সাইবার ক্রাইম বা প্রযুক্তিগত অপরাধও। অনেকেই সাইবার ক্রাইম শব্দটির সঙ্গে হয়তো পরিচিত নন। পরস্পর নেটওয়ার্ক দ্বারা সংযুক্ত যন্ত্রগুলো ব্যবহার করে যখন কোনো অপরাধ করা হয়, তখন তাকে সাইবার ক্রাইম বলে। যারা এ ধরনের অপরাধে যুক্ত থাকে, তাদের বলে সাইবার অপরাধী।

বাংলাদেশ সরকারের ই-গভর্নমেন্ট কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম-বিজিডি ই-গভ সিআইআরটি নামে সংস্থাটি যারা বাংলাদেশে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে তারা একটি বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে যে, বিভিন্ন আর্থিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভোক্তা ও গ্রাহকদের লক্ষ্য করে সাইবার হামলার হুমকি রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে, হুমকির পেছনে লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে তাদের বটনেট ছড়িয়ে দেওয়া। এর আওতায় হামলাকারীরা বাংলাদেশ সরকারের কোভিড ১৯-এর টিকা দিতে নিবন্ধনের জন্য যে ওয়েবসাইট রয়েছে, সেটির আদলে ভুয়া ওয়েবসাইট বানিয়ে মানুষকে আকর্ষণ বা ফিশিংয়ের চেষ্টা করে বলে জানানো হচ্ছে। ফলে চুরি হয়ে যাচ্ছে অনেক ব্যক্তিগত তথ্য। এ ছাড়া চাকরি থেকে শুরু করে ব্যাংকিং ও স্বাস্থ্যসেবা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই মানুষ এখন অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে। এর অর্থ হলো, সাইবার অপরাধীদের দ্বারা আপনার তথ্য চুরির ঝুঁকি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে সবার আগে দরকার সচেতনতা। আর এজন্য সচেতন করতে হবে শহর থেকে গ্রামের সব বয়সের মানুষকে। এ ছাড়া কিছু পদক্ষেপ নিলে সহজেই সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। ইমেইল ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অপরিচিত কারো ইমেইলে দেওয়া লিংকে ক্লিক করা যাবে না। সন্দেহজনক ইমেইল থেকে কখনো ফাইল ডাউনলোড করবেন না। হ্যাকাররা নকল লিংকগুলোকে আসলের মতো করে উপস্থাপন করে, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পাসওয়ার্ড ব্যবহার এর ক্ষেত্রে জটিল, একই সঙ্গে বড় ও ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। পাসওয়ার্ড বা কিপারের মতো পাসওয়ার্ড ম্যানেজারও ব্যবহার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কোন ইমেইলে লগইন পেইজের লিংক দেওয়া থাকলে, সেখানে ক্লিক না করে, ব্রাউজারে তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে সেখানে লগইন করুন। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্যাকআপ রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কম্পিউটার, ফোন ও ট্যাবে ব্যবহৃত সফটওয়্যারগুলো হালনাগাদ করা থাকতে হবে। টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনের মতো অতিরিক্ত নিরাপত্তা স্তর ব্যবহার করা যেতে পারে। পিসিতে লোকানো ভাইরাস বা রুটকীট শনাক্ত করা খুব কঠিন, যা কেবল একটি অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার ব্যবহার করেই করা যেতে পারে।

পুলিশের ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিডিএমএস) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাইবার অপরাধের ঘটনায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ৩ হাজার ৬৫৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৭৫টি মামলা সাইবার ট্রাইব্যুনালে গেছে। নিষ্পত্তি হয়েছে ৫২২টির। ২৫ মামলায় আসামিদের সাজা হয়েছে। ইউনিসেফের গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুর মধ্যে ৩২ শতাংশ সাইবার হয়রানির মুখে পড়ছে।

সাইবার হামলা এখন পৃথিবীরই মাথাব্যথার কারণ। তাই আমাদের আরো সতর্ক থাকতে হবে। পাসওয়ার্ড হ্যাকিং, ইমেইলের নিরাপত্তা, অনলাইনে প্রলোভন, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সাইট থেকে বিপদ, এটিএম কার্ডজনিত বিপদ, নেটব্যাংকিং ও মোবাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত প্রয়োজন। সরকারের আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং জনগণের সচেতনতাই পারে সাইবার আক্রমণ থেকে সবাইকে নিরাপদ রাখতে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নিরাপদ,সাইবার জগৎ,সম্পাদকীয়,অপরাধ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close