সম্পাদকীয়

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

রমজানের আগে বাজার নিয়ন্ত্রণ জরুরি

প্রতি বছরের মতো এবারও রমজান শুরুর আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। যাতে রমজানে এ বিষয়ে অভিযোগের কোনো সুযোগ না থাকে। দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট অত্যন্ত সুচতুরভাবে এই অবৈধ প্রক্রিয়াটি চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি সংস্থা টিসিবি বলছে, দুই মাসের ব্যবধানে ছোলা, মসুর, ভোজ্য তেল, আদা, রসুন, চিনি, গরুর মাংস, ব্রয়লার মুরগি ও খেজুর এ ৯ পণ্যের দাম সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ওদিকে রমজান ঘিরে ভোজ্য তেলের দামে লাগাম টানতে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও বাজারে তা কার্যকর হয়নি। এ পর্যায়ে সরকারের উচিত কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ ও সব ধরনের অনিয়ম দূর করে বাজারে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা।

পবিত্র রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করেন। অথচ এ রমজানেই বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা লাভের আশায় নিত্যপণ্যের দাম অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা দেখেছি, সময় ও সুযোগ বুঝে অতি মুনাফালোভী অসাধু একটি চক্র প্রায়ই বাজারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়ে থাকে, এবারও যে তার ব্যতিক্রম ঘটবে না, এখনই তা আঁচ করা যাচ্ছে।

মনে রাখতে হবে, যোগসাজশের মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থার স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত করা হলে একদিকে ভোক্তা স্বার্থের হানি ঘটে, অন্যদিকে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ওপর পড়ে এর বিরূপ প্রভাব। বিগত কয়েক বছরে সরকারের আন্তরিকতা ও নানামুখী পদক্ষেপ সত্ত্বেও পণ্যের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি কেন রোধ করা যায়নি, তা খতিয়ে দেখা উচিত। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষম খাদ্য বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে কঠোর বাণী উচ্চারণ করেছেন। আমাদের কথা হলো, খাদ্যপণ্যের দাম যদি সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়, সেক্ষেত্রে সুষম খাদ্য গ্রহণের বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। সুষম খাদ্য গ্রহণ তখনই সম্ভব হবে, যখন খাদ্যপণ্যের দাম সহনশীল পর্যায়ে থাকবে।

এ দেশে ভোক্তাশ্রেণি একদিকে ভেজাল খাদ্য গ্রহণে বাধ্য হচ্ছে, অন্যদিকে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম মেটাতে গিয়ে তারা দিশাহারা হয়ে পড়ছে। ভোক্তাশ্রেণির এ দুর্ভোগ কীভাবে লাঘব করা যাবে, তা ভাবতে হবে সরকারকেই। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, রমজানের সব পণ্যেরই পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার কথা হয়েছে, রমজান মাসে তারা ভোগ্যপণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখবেন। আমরা চাই, বাণিজ্যমন্ত্রীর এই আশ্বাসের বাস্তব প্রতিফলন ঘটুক। যাতে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস রমজানে স্বস্তিতে থাকতে পারে।

ব্যবসায় মুনাফা অর্জন স্বতঃসিদ্ধ ও স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। তবে বাস্তবতা হলো, দেশে বছরজুড়ে পণ্যমূল্যে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের বিপরীত চিত্রই পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু মুনাফা অর্জনের নামে নীতিজ্ঞানহীন অনৈতিক কর্মকান্ড সমর্থনযোগ্য নয়। ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের দুর্দশা লাঘবে আন্তরিক হলে সারা বছর তো বটেই, রমজান-ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবেও বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এবারের রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয়সহ সব ধরনের পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারের পাশাপাশি দেশের ব্যবসায়ীরাও আন্তরিক হবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মুক্তমত,রমজান,বাজার,সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close