সম্পাদকীয়

  ১৫ জানুয়ারি, ২০২১

ইটভাটা বন্ধে উদ্যোগ বাড়াতে হবে

আধুনিকতার এ যুগে মানুষ তো একটু আধুনিক হবেই। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এ কথা যেমন সত্য; ঠিক তেমনি এ দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে, যেহেতু ইট দিয়ে বাড়ি তৈরি করতে হবে। সেই অনুযায়ী পর্যাপ্ত ইটেরও তো দরকার। যার দরুন যত্রতত্র ইটভাটা তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। এখন তো গ্রামাঞ্চলেও ইটভাটার যত্রতত্র সমাহার। একদিকে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর ইটের চাহিদা যেমন পূরণ করছে এসব ইটভাটা; ঠিক তেমনি এই জনগোষ্ঠীর চরম হুমকির মুখেও ফেলে দিচ্ছে। বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, শব্দদূষণ সবকিছু উপহার দিচ্ছে আমাদের এই ইটভাটা। ইটভাটার কারণে পরিবেশ দূষণ তো হচ্ছেই, সঙ্গে ভূমির উর্বরতা হ্রাস ও বন উজাড়ও হচ্ছে।

দেশে সব মিলিয়ে সাত হাজারের বেশি ভাটায় পোড়ানো হয় দেড় হাজার কোটির বেশি ইট। আর সঙ্গে সঙ্গে এই ইটভাটার সংখ্যা দিন দিন শুধুই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বিপুলসংখ্যক ইট পোড়াতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ২০ হাজার লাখ টন কাঠ এবং সমপরিমাণ কয়লা। কয়লা ও কাঠ পোড়ানোর ফলে ৯০ লাখ টনের বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি হয়, যার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে। বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে দেখা যায়, ইট প্রস্তুত খাত হলো দেশের গ্রিনহাউস গ্যাসের সর্ববৃহৎ উৎস।

বাংলাদেশ সরকারও ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন’ করেছে ২০১৩ সালে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধন করে সংসদে পাস হয়। সর্বশেষ সংশোধন অনুযায়ী ধারাটি এ রকম হয় যে, ইটভাটায় মাটির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ বিশেষ করে ‘টপ সয়েল’ ব্যবহার বন্ধ করা, ইটের বিকল্প ব্লক উৎপাদন ও ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা আরোপ, ইটভাটার জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক এবং ব্লক তৈরিতে লাইসেন্সের অপ্রয়োজনীয়তা, নির্দিষ্ট এলাকায় ইটভাটার জায়গা ও ভাটার সংখ্যা নির্ধারণ, লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা চালালে দুই বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা। আইন আছে, প্রয়োগ নেই। এটাই বাস্তব চিত্র।

ইটভাটার ধোঁয়ায় গাছ, ফলমূল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। মানুষ সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। কয়লা থেকে ভীষণ ক্ষতিকর কার্বন মনোক্সাইড নির্গত হয়। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে দেশে বছরে এক লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। বর্তমানে পৃথিবীর দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান প্রথমদিকে। বায়ুতে যেসব ক্ষতিকর উপাদান আছে, তার মধ্যে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর উপাদান হচ্ছে পিএম ২.৫। বর্তমানে রাজধানী ঢাকার বায়ুতে এর মাত্রা বেড়েই চলেছে। ফলে এ শহর সাধারণ মানুষের বসবাসের জন্য সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় এর বিস্তৃতি এখন গ্রামাঞ্চলেও পড়ছে।

আমরা জানি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে ইটের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। কিন্তু ইটের বিকল্প হিসেবে ব্লক শিল্প উৎপাদন ও বিকাশে নেই তেমন কোনো অগ্রগতি। কৃষিজমি নষ্ট ও পরিবেশের ক্ষতি করে ইট তৈরি বন্ধ করতে হবে। মাটি (টপ সয়েল) দিয়ে ইট বানানো চলবে না। মাটির ইটের বিকল্প হিসেবে যেসব নতুন উপকরণ ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়েছে, তার ব্যবহার বাড়াতে হবে। সংশ্লিষ্ট আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিটাও নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই আমরা বায়ূদূষণমুক্ত বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারব। আমাদের প্রত্যাশাও পূরণ হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইটভাটা,সম্পাদকীয়,পরিবেশ দূষণ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close