সম্পাদকীয়

  ১৮ অক্টোবর, ২০২০

ক্ষুধামুক্তির অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক

দেশের যেকোনো অগ্রগতি আমাদের অনুভূতিকে নাড়া দেয়। আমরা উদ্বেলিত হই। কাজের গতিকে বেগবান করে। এককথায় শক্তির জোগানদাতা এই অগ্রগতি। ক্ষুধামুক্তির লড়াইয়ে গত এক বছরে বাংলাদেশের বড় অগ্রগতি হয়েছে। অপুষ্টির হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নতি থাকায় বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বিশ্বের ১০৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান উঠে এসেছে ৭৫তম স্থানে। যেখানে ভারতের অবস্থান ৯৪তম। চলতি বছরের গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে (জিএইচআই) এ তথ্য প্রকাশ করে। গত বছর এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮৮তম।

জিএইচআইয়ের তথ্যমতে, ক্ষুধা মেটানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। গত বছরও ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এবারের এগিয়ে যাওয়াটা চোখে পড়ার মতো। এক লাফে ১৩ ধাপ এগিয়েছে। সংবাদটি এ দেশের মানুষের জন্য আনন্দদায়ক এবং পাশাপাশি নতুন করে জেগে ওঠার হাতছানিও বটে। সূচকে মোট ১০০ স্কোরের মধ্যে এবারে বাংলাদেশের স্কোর ২০ দশমিক ৪। ২০০০ সালে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩৪ দশমিক ১। অর্থাৎ গত ২০ বছরের কম সময়ে ক্ষুধা নিবারণে জাতীয় পর্যায়ে অনেকখানি অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের। বিশ্ব ক্ষুধাসূচকে শূন্য পেলে বুঝতে হবে, ওই অঞ্চলে ক্ষুধা নেই। আর এই সূচকে ১০০ পেলে, তা ক্ষুধার সর্বোচ্চ মাত্রা বোঝাবে।

এই সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের দক্ষিণ সাহারা ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ক্ষুধা ও অপুষ্টির সর্বোচ্চ মাত্রা বিরাজ করছে। এ ছাড়া বিশ্বের তিনটি দেশে ক্ষুধার মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে চাদ, পূর্ব তিমুর ও মাদাগাস্কার। আরো আটটি দেশে ক্ষুধার মাত্রা উদ্বেগজনক হতে চলেছে। যেসব দেশ উদ্বেগজনক অবস্থানে আছে, সেই দেশের নাগরিকরাই জানেন ক্ষুধার অর্থ কী এবং কতটা যন্ত্রণাদায়ক। আমরা আজ যে সুন্দর একটি অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি, এর মূল নায়ক আমাদের কৃষক সমাজ। সেই সঙ্গে সরকারের সঠিক পরিকল্পনা এবং সাহায্য-সহযোগিতা, এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কৃষক সমাজকে বৃহদাংশে গতিশীল করেছে। দেশ এখন ক্ষুধামুক্তের দিকে এগিয়ে চলেছে। এধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ একটি ক্ষুধামুক্ত দেশে পরিণত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

এবারের সূচকের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ মহামারির নানাবিধ প্রভাবকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্ষুধা ও অপুষ্টি-সংক্রান্ত অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা যুক্ত করা হয়েছে এই সূচকে। তবে বিশ্ব ক্ষুধাসূচক এ কথাও বলছে যে, বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার মাত্রা এখন সহনীয় পর্যায়ে আছে। তবে পৃথিবীর সব অঞ্চলে তা সমান নয়। জিএইচআইয়ের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, ক্ষুধার মাত্রা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সঠিক পথে নেই বিশ্ব। এটি টেকসই উন্নয়নের দ্বিতীয় লক্ষ্যমাত্রা। তবে বর্তমান গতিতে চললে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। আমরা মনে করি, বিশ্বের অনেক দেশ আজ ক্ষুধামুক্ত অবস্থানে রয়েছে। আমরাও তাদের মতো সেই উচ্চতায় ওঠার স্বপ্ন দেখি। আমাদের বিশ্বাস, সে যোগ্যতা আমাদের আছে। আর কৃষক সমাজকে সঠিকভাবে লালনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে সেই স্বপ্ন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অগ্রগতি,ক্ষুধামুক্তি,সম্পাদকীয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close