সম্পাদকীয়

  ১২ অক্টোবর, ২০২০

জনগণের সেবা প্রদানই হোক সবার মূল লক্ষ্য

দেশজুড়ে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে আছে ঝুঁকিপূর্ণ অসংখ্য লিকেজ গ্যাসলাইন। এর ফলে গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থাও যেমন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে; তেমনি অহরহ ঘটছে মারাত্মক দুর্ঘটনা। এ অবস্থা শুধু আবাসিকে নয়, অনেক শিল্প-কারখানায়ও বিরাজমান। কখনো সংস্থার সমন্বয়হীনতা, কখনো দেখভালের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্যাস পাইপলাইন। এভাবে ঘর থেকে পথ সবখানেই মৃত্যুফাঁদ। ঝরছে জীবন। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সম্পদ। নারায়ণগঞ্জ বিস্ফোরণ যার সবশেষ উদাহরণ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, গ্যাসের লিকেজ লাইন নিয়ন্ত্রণে আনতে হয় বিচ্ছিন্নকরণ প্রক্রিয়ায় যেতে হবে অথবা দুর্ঘটনা রোধে সরকার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে শিগগিরই একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

বলা সংগত, দেশের ৭০ শতাংশ গ্যাস বিতরণ লাইনই ঝুঁকিপূর্ণ। স্থাপিত লাইনের অর্ধেকের মেয়াদ পেরিয়েছে বহু আগে। এ ছাড়া হয় না নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অবৈধ সংযোগ ও লাইন স্থাপন; যা গ্যাস নেটওয়ার্ককে করে তুলেছে অনিরাপদ। ফলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জে এক মর্মান্তিক গ্যাস পাইপলাইনের বিস্ফোরণে প্রাণ গেছে ৩৪ জনের। ১৯৬০ সালে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ শুরু হয়। বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ শুরু ১৯৬৭ সালের দিকে ঢাকায়। এরপর দেশজুড়ে গ্যাসের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা দেশে গ্যাস নেটওয়ার্কের পরিমাণ ২৪ হাজার ২৮৭ কিলোমিটার। এরমধ্যে বিতরণ ও সার্ভিস লাইন প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার। এ লাইনের ৭০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ।

গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত ‘গ্যাস পাইপলাইনে মৃত্যুফাঁদ’ শীর্ষক বিশেষ প্রতিবেদনে বিষয়টির উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ঢাকা বিভাগে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত তিতাস গ্যাসের ১২ হাজার ২৫৩ কিলোমিটার পাইপলাইন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৭ হাজার কিলোমিটার; যার ৭০ শতাংশ অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে ২০ বছর থেকে শুরু করে ৪০ বছরের পুরোনো বিতরণ লাইনও রয়েছে। মাঝে মাঝে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু লাইন পাল্টানো হলেও লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম তেমন নেই। ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে প্রায় এক হাজারটি দুর্ঘটনার পেছনে দায়ী গ্যাস লিকেজ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, লিকেজজনিত দুর্ঘটনা ঠেকাতে তিতাসের লাইন সার্ভের কোনো বিকল্প নেই। এ ছাড়া যেহেতু কোনো ডিজিটাল ম্যাপিং নেই, তাই অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

ধানমন্ডি-২৭-এ গ্যাসলাইন লিকেজের জন্য ‘তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে দায়ী করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। পাশাপাশি তিতাস কর্তৃপক্ষ গ্যাসলাইন লিকেজের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে দায়ী করে গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদান করেছে। তবে সবারই মনে রাখতে হবে, জনদুর্ভোগে ব্লেইম গেম নয়, কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের মাধ্যমে মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। একে অপরের ছিদ্রান্বেষণ বন্ধ করে সব সংস্থাকে সুষম সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জনগণের সেবা প্রদানই হোক সবার মূল লক্ষ্য।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সেবা,সম্পাদকীয়,গ্যাসলাইন,দুর্ঘটনা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close