সম্পাদকীয়
এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল : ইতিবাচক দিকটাই বেশি
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হবে না। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে হবে মূল্যায়ন। পাস শতভাগ। বিভাগ পরিবর্তনকারী শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য থাকবে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এটাই সরকারের সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্ত নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কথা উঠেছে। আলোচিত হচ্ছে ইতিবাচক ও নেতিবাচক নিয়ে। বিতর্ক হতেই পারে। তবে বিতর্কের সময় সময় ও পরিবেশকে মনে রাখাটা খুবই জরুরি। আমরা এমন একটা সময় অতিক্রম করছি, যা স্মরণকালে এমন দুর্যোগ আর আসেনি। মোকাবিলাও করতে হয়নি। বিশ্বই আজ করোনা মহামারিতে আক্রান্ত। এই মহামারি কেড়ে নিয়েছে ১০ লাখেরও বেশি জীবন। শুধু জীবনই বিনষ্ট হয়নি। ধসে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। কল-কারখানার চাকা বন্ধ। কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছে কয়েক কোটি মানুষ। এমন একটি সময়ে স্কুল-কলেজ খুলবে কী খুলবে না, তা নিয়েও চলছে আলোচনা ও বিতর্ক। করোনা এখনো সরেনি। কবে সরবে তাও কেউ জানে না। এর মধ্যে শোনা যাচ্ছে করোনা আবার ভয়াবহ রূপে ফিরে আসতে পারে। ইতোমধ্যেই বেশ কিছু দেশে সংক্রমণের হার কমে গিয়েও আবার বাড়তে শুরু করেছে। যদিও বাংলাদেশের অবস্থা অনেকটা ভালো। ক্রমশ কমার দিকে। তবে আবার ফিরে আসবে কী আসবে না, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কারো পক্ষে বলা সম্ভব হচ্ছে না। শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এটাই হচ্ছে আমাদের বাস্তবতা ‘সময় ও পরিবেশ চিত্র’। এ অবস্থার ওপর দাঁড়িয়ে নিতে হবে সিদ্ধান্ত।
এবারের এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই বলেছেন, ভালো সিদ্ধান্ত। করোনার কারণে অনেক পরীক্ষার্থী মানসিকভাবে চাপে ছিল। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও পরীক্ষা দেওয়ার মতো মানসিক অবস্থা থেকে তারা ছিল অনেকটা দূরে। এ ছাড়া করোনা-ঝুঁকি এড়াতে এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে, তাও আমাদের জানা নেই। তবে কেউ কেউ ভিন্ন মতও দিয়েছেন। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর মতে, বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এখন এসব পরীক্ষার্থীর ব্যাপারে পরবর্তী কার্যক্রম যথাযথভাবে গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে প্রস্তুতি এখন থেকে নেওয়া যেতে পারে। সম্ভব হলে মূল্যায়নটা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নেওয়া যেতে পারে। বিষয়ভিত্তিক আগাম ঘোষণা থাকলে শিক্ষার্থীরা সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে।
তিনি আরো বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে একটা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার অবসান হয়েছে। এখনো সংক্রমণের হার ৭ শতাংশের বেশি। ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর সঙ্গে আরো ১৪ লাখ অভিভাবক এবং পরীক্ষা-সংশ্লিষ্টরা থাকবেন। তারা কতটুকু সংক্রমণ এড়াতে সক্ষম সেখানেও কোনো নিশ্চয়তা নেই। আবার গ্রাম থেকে যারা শহরে এসে পরীক্ষা দেবে, তাদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেবে কে! পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হলে এরা বিপাকে পড়ত। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সব বিবেচনায় এর চেয়ে ভালো আর কোনো নির্দেশনা এ মুহূর্তে নেই।
পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে। তারা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে, তখনো এ বিষয়টি নিয়ে একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে থাকবে। এটা ‘অ্যাভেইলেবল’পদ্ধতির মধ্যে একটা সলিউশন। তবে ‘বেস্ট সলিউশন’ হয়নি।
কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেছেন, এটি একটি নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত হয়েছে। এত দিন ঝুলিয়ে রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি। এ সিদ্ধান্ত নিলে আগেই নেওয়া যেত। তাহলে আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিকে কেন্দ্র করে যেসব সমস্যা তৈরি হবে, সেগুলো নিয়ে চিন্তা করার সময় পাওয়া যেত। এখন হাতে সে সময় নেই। জানুয়ারিতে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা হবে এ মুহূর্তে তা বলা কঠিন। আসলে এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সমস্যা এক ঘর থেকে আরেক ঘরে গেল। আমরা এখন শুধু অপেক্ষাই করতে পারি। সময়ই বলে দেবে এর সঠিক জবাব।
পিডিএসও/হেলাল