সম্পাদকীয়
রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার মধ্যেই সংকটের সমাধান
পৃথিবীতে সংকট মোকাবিলা করেই টিকে আছে মানব সম্প্রদায়। ভবিষ্যতে এর ব্যত্যয় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই সংকট তৈরির ক্ষেত্রে একদিকে রয়েছে প্রকৃতি; অন্যদিকে মানব সম্প্রদায়। প্রকৃতি যে সংকট তৈরি করে, তা সাময়িক। আর তা অতিক্রম করার ক্ষমতা মানুষের আছে। আর মানবসৃষ্ট সংকটের কোনো শেষ নেই। শত-সহস্র বছর ধরে চলার পরও শেষ হবে না; চলবে অনন্তকাল। তবে তা বন্ধ করার ক্ষমতা যে কারো নেই, তাও নয়। মানবসৃষ্ট সংকটকে একমাত্র মানুষরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যদি মানুষ এ ক্ষেত্রে তার ইচ্ছাশক্তিকে ব্যবহার করে। সমস্যা এখানেই। ভোগবাদীরা তা করবেন না। ভোগবাদী সমাজব্যবস্থা তাদের এভাবেই তৈরি করেছে। আর সে কারণেই জন্ম নিয়েছে অনৈতিক কর্মকান্ডের, বিশ্বজুড়ে বেড়ে ওঠা আধিপত্যবাদের। তারপরও টিকে আছে পৃথিবী। ভোগবাদী দর্শনকে টিকিয়ে রাখার জন্য যেটুকু ছাড় দেওয়া যায়, তার মধ্যেই আমাদের বেঁচে থাকা। তা না হলে রোহিঙ্গারা আজ কেন নিজেদের বাস্তুভিটা থেকে বিতাড়িত হবে! উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয় নিতে হবে বাংলাদেশে?
বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে। দেন-দরবারও কম হয়নি, এখনো হচ্ছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই সংকটের সমাধান হয়নি। মিয়ানমারের হাতে তৈরি হয়েছে এই সংকট। আর তাদের হাতেই রয়েছে এর সমাধান। রোহিঙ্গাদের পূর্ণ মর্যাদায় দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হলেই সংকটের সমাধান হবে। এর বাইরে দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই। বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলাই তার দর্শন। কিন্তু সব কিছুরই একটা সীমা আছে। সীমা লঙ্ঘনকারীকে আল্লাহপাকও পছন্দ করেন না। একইভাবে কোনো নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষও সীমা লঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করতে পারেন না। আর তাই বারবার আলোচনার টেবিলে উঠছে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়টি। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশন উপলক্ষে বাংলাদেশ, কানাডা, সৌদি আরব ও তুরস্ক ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সাম্প্রতিক চার বছর : টেকসই সমাধান নিশ্চিতের চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সাইড ইভেন্টের আয়োজন করে। এই ভার্চুয়াল ইভেন্টে জাতিসংঘের সদস্য দেশ, জাতিসংঘ সদর দফতর ও এর সংস্থা, সিভিল সোসাইটি ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সবাই প্রায় একই কথা বলেছেন। বলেছেন, এ সমস্যার মানবিক ও রাজনৈতিক সমাধানের জন্য বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সমর্থন জরুরি। এজন্য তারা কাজ করছেন এবং এই মঞ্চ থেকে তারা বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তারা সংকটের শুরুতে পূর্ণ মানবিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে আশ্রয় দিয়ে এবং এ পর্যন্ত এই বোঝা বহন করে বাংলাদেশ যে উদারতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
আমরা মনে করি, মিয়ানমার খুব সহজে এ সংকট সমাধানে এগিয়ে আসবে না। কেননা এরই মধ্যে তারা অমানবিকতার সব স্তর অতিক্রম করেছে। এখনো তা অব্যাহত রেখেছে। বিশ্ব সম্প্রদায় যে চাপ প্রয়োগ করছে তা দেশটির জন্য যথেষ্ট নয়। বাস্তবতা সে কথাই বলছে। আলোচনার মাধ্যমে এ সংকটের সমাধান করতে হলে আরো বড় মাপের চাপ প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের অনুরোধপূর্বক মিয়ানমারকে অর্থনৈতিক অবরোধের আওতায় আনুন। তাহলেই চাপ বাড়বে। বৃহৎ চাপের মুখে পড়বে মিয়ানমার সরকার। তখন হয়তো সমাধানে এগিয়ে আসতে বাধ্য হবে দেশটি। বিশ্বজুড়ে মানবতা মুক্তি পাক- এটুকুই প্রত্যাশা।