সম্পাদকীয়

  ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

অর্থনীতির গতি ফিরছে, শঙ্কামুক্ত হচ্ছে মানুষ

করোনা মহামারিতে কেবল যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে তা নয়। মানুষকে যে বিকলাঙ্গ করে রেখেছে তাও নয়। অর্থনীতির চাকাকে স্তব্ধ করে রেখেছে টানা ছয় মাস। ফলে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও সংখ্যাগত দিক দিয়ে তা কয়েক কোটিকে স্পর্শ করেছে। আমাদের দেশেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। আমাদের অর্থনীতিও ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। তবে সব বাধাবিপত্তি কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি। সব ক্ষেত্রেই বাড়ছে কর্মচাঞ্চল্য।

চলমান কোভিডের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া শিল্প-কারখানার চাকা ঘুরছে। বাড়ছে উৎপাদনও। এ ক্ষেত্রে সরকারের দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজ ও দ্রুত নেওয়া কৌশলগুলো বেশ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। গতি ফিরেছে রফতানি খাতেও। ব্যাংকগুলোতে আমদানি-রফতানির এলসি খোলার হারও বাড়তে শুরু করেছে। রেমিট্যান্সপ্রবাহে সৃষ্টি হয়েছে আশাতীত সাফল্য। পোশাক শিল্প খাতের কারখানাগুলোতেও পূর্ণোদ্যমে শুরু হয়েছে উৎপাদন। এ খাতের স্থগিত হওয়া অর্ডারগুলো ফিরে আসার সঙ্গে নতুন নতুন অর্ডারও আসতে শুরু করেছে। এক কথায় বলা যায়, আমাদের অর্থনীতি আবারও মাজা সোজা করে ট্র্যাকে উঠেছে; যা প্রকৃত অর্থেই জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য একটি ইতিবাচক সংবাদ।

করোনাকালের আগে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে ধারাবাহিকতা ছিল, এ মুহূর্তে তার পুরোটা ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন বিশ্ববাজারের দিকে তীক্ষè নজর রাখা। সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও এদিকটায় তাদের নজরদারিকে বাড়িয়ে দেবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। এদিকে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) ২০২০ আপডেটে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তারা বলেছে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এগিয়ে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে করোনাভাইরাস সংক্রমণকে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি চিহ্নিত করে এডিবি বলছে, মহামারি দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোর যে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হচ্ছে, তা গতি হারাবে। তবে শিল্প-কারখানায় উৎপাদনের গতি বাড়ায় এবং রফতানি পণ্যের ক্রেতা দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকায় বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। সংস্থাটি আরো বলেছে, গত ছয় দশকের মধ্যে এ বছরই প্রথম উন্নয়নশীল এশিয়ার অর্থনীতি সংকুচিত হবে। এ বছর উন্নয়নশীল এশিয়ার প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হবে দশমিক ৭ শতাংশ।

পাশাপাশি এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়াসুকি সাওয়াদা বলেন, ‘২০২০ সালের বাকি সময়ে এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের প্রবৃদ্ধির পথ হবে কণ্টকাকীর্ণ। এমনকি দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণ আবারও লকডাউনের মতো পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে, যা অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে লাইনচ্যুত করতে পারে।’

ইয়াসুকির এ ঘোষণা সামনে রেখেই আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কার্যকর করার কথা ভাবতে হবে। কেবল সরকারকে ভাবলে চলবে না। আগামীতে করোনার ভয়াবহ রূপের কথা চিন্তা করে আগাম সাবধানতা অবলম্বনই হবে আমাদের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখার একমাত্র উপায়। আর এজন্য নিজ দায়িত্বে প্রত্যেককেই মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেননা, সংক্রমণ রোধে মাস্কের ভূমিকা ৮০ ভাগ। এজন্য সরকারকেও কঠোর হতে হবে। ঘরের বাইরে মাস্কবিহীন কাউকে পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক জরিমানার ব্যবস্থা করা গেলে বিষয়টি ইতিবাচক ফল দিতে পারে। সরকারকে প্রস্তাবটি বিবেচনা করে দেখার পরামর্শ রাখছি। এ ক্ষেত্রে মনে রাখা ভালো, আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হব। সুতরাং নিজেকে রক্ষার স্বার্থে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই হবে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মানুষ,অর্থনীতি,সম্পাদকীয়,করোনা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close