সম্পাদকীয়

  ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০

বাংলাদেশ ইলিশ উৎপাদনে সেরা

তলাবিহীন ঝুড়ির অস্তিত্ব এখন আর নেই। রূপকথার গল্পে রূপান্তর ঘটেছে। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে চলেছে। গতিটাও ভালো। মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। কৃষিপণ্য উৎপাদনে আমাদের অগ্রগতি অপ্রতিরোধ্য। তবে এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে না পারলেও সাফল্য চোখে পড়ার মতো। মানুষকে আর অনাহারে থাকতে হয় না। উৎকণ্ঠায় দিন কাটাতে হয় না। খাবার প্রশ্নে এখন এ দেশের মানুষ অনেকটা শঙ্কামুক্ত। আর এই শঙ্কামুক্তির পেছনে রয়েছে কতগুলো ইতিবাচক পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত এবং তা বাস্তবায়ন। যার একটি জীবন্ত উদাহরণ, ‘মৎস্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশের চলতি মাসের হিসাবে বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশই এখন বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে’। অথচ চার বছর আগেও চিত্রটি ছিল ভিন্ন।

তখন দেশটি বিশ্বের মোট ইলিশ উৎপাদনের ৬৫ শতাংশ উৎপাদন করত। মাত্র চার বছরে এ উল্লম্ফন অনেকটা ম্যাজিকের মতো। এ ক্ষেত্রে সরকারকে ম্যাজিশিয়ানের তকমা দেওয়া হলে অতিরিক্ত কিছু দেওয়া হবে বলে মনে করার কোনো কারণ দেখি না। কেননা মা ও জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধ করা, অভয়াশ্রম বাড়ানো ও জেলেদের সুরক্ষা দেওয়ায় এসেছে এ সাফল্য। আর সততা এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সরকার তার কর্তব্য সম্পাদন করেছে। করেছে বলেই বাজারে আজ ইলিশ নিয়ে যে চিত্র, তা অনেক বছরের ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে।

মাছের রাজা ইলিশ। আবার যেন সেই রূপে ফিরে এসেছে আমাদের হেঁশেলে। আকারে আগের তুলনায় অনেক বড়। গড় ওজন ৯৫০ গ্রাম। গত চার বছরে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে ইলিশের আকার ও উৎপাদন। পাশাপাশি সে তুলনায় প্রতিবেশী ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও পাকিস্তানে ইলিশের উৎপান কমেছে। বাংলাদেশের পরই ইলিশ উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে ভারত। তবে চলতি বছর তাদের উৎপাদন প্রায় সাড়ে ১০ শতাংশ নেমেছে। বাংলাদেশের এ সাফল্য অনেকের কাছে ঈর্শনীয় হলেও ওয়ার্ল্ডফিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘সেখানে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারি সংস্থাগুলো যে মডেল তৈরি করেছে, তা এখন বিশ্বের অনেক দেশ অনুসরণ করছে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বিভিন্ন নদ-নদীতে ইলিশের যে অভয়াশ্রম তৈরি করেছে, তা ধারাবাহিকভাবে এই মাছের উপাদন বাড়িয়েছে। ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো অভয়াশ্রম তৈরি করে মা ও জাটকা ইলিশের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেনি।

এদিকে বাংলাদেশ মৎস্য অধিদফতর ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী গবেষণা করে বলেছিলেন, বাংলাদেশে ইলিশের সর্বোচ্চ টেকসই উৎপাদন ৫ লাখ ৩০ হাজার টন হতে পারে। সেই পূর্বাভাসকে ভুল প্রামাণ করেছে আজকের বাংলাদেশ। মাত্র চার বছরেই ইলিশের উৎপাদন সেই বেঁধে দেওয়া সীমা অতিক্রম করেছে। গত বছরের নভেম্বরে ওযার্ল্ডফিশের গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে ৬ লাখ ৭০ হাজার টন ইলিশ উৎপাদন সম্ভব।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, বাংলাদেশের ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার সব কটিই ছিল বৈজ্ঞানিক গবেষণানির্ভর। আর ইলিশের অভয়াশ্রম রক্ষা ও নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ না ধরার কাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে একযোগে কাজ করেছে সরকারি সংস্থাগুলো। যার সুফল এখন আমরা পাচ্ছি।

এই সাফল্যের মধ্য দিয়ে একটি কথা নিশ্চিত করে বলা যায়, ‘আমরাও পারি’। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে এমন সাফল্য আমরা সব ক্ষেত্রেই পেতে পারি। আর এ ধারা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ একটি স্বনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এবং আমরা সে রকম একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই এটাই জাতি হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
উৎপাদন,ইলিশ,সেরা,সম্পাদকীয়,মাছ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close