সম্পাদকীয়
ঘুরে দাঁড়াতে হবে অর্থনীতিকে
অর্থনীতি! ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি। একটি দেশের নাগরিক কতটা ভালো থাকবে তা নির্ভর করে এই চালিকাশক্তির ওপর। অর্থনীতি ভালো থাকলে রাষ্ট্র সুন্দর থাকে, নাগরিকদের জীবনযাপনও হয় নান্দনিক। অতএব, ভালো অর্থনীতির কোনো বিকল্প নেই। করোনা আগ্রাসন পৃথিবীর অর্থনীতিকে ভঙ্গুর করেছে। বিপদগ্রস্ত করেছে উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থাকে। বাংলাদেশও এর বাইরে থাকতে পারেনি। অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য লড়ছে মানুষ, লড়ছে রাষ্ট্র এবং সরকার।
সাধারণ ছুটি তুলে নেওয়ার পর সবই এখন চালু হয়েছে। তবে করোনা সরেনি। করোনার মাঝেই লড়াইটা চলছে। এখানে আমাদের মনে রাখা উচিত, আমরা একই সঙ্গে দুটি সেক্টরে যুদ্ধ করছি। প্রথমত, করোনার বিরুদ্ধে আর দ্বিতীয়ত বিপদগ্রস্ত অর্থনীতিকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে। এভাবে যুদ্ধ করা ছাড়া আমাদের জন্য দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই। আমরা যুদ্ধে আছি এবং এভাবেই চালিয়ে যাব।
করোনার বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ তা কেবল রাষ্ট্র বা সরকারের অংশগ্রহণে সমস্যার সমাধান হবে না। অভিজ্ঞতা বলছে, প্রত্যেক ব্যক্তি মানুষকেই নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের মধ্য দিয়েই তাকে অগ্রসর হতে হবে। তাহলে আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে করোনামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সক্ষম হব। বিশেষজ্ঞরাও ভাবছেন এভাবেই। আর অর্থনীতি! লকডাউন পর্যায় শেষ করে বাংলাদেশ এখন অনেকটা গতিশীল হয়েছে। আমদানি-রফতানি, উৎপাদন, বিপণন, উন্নয়ন কর্মকান্ড ও পরিবহন চলাচল আবার স্বাভাবিক হচ্ছে। স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতির চাকা আবার ঘুরতে শুরু করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আরো কিছুটা সময় লাগবে।
করোনা প্রতিক্রিয়ায় দেশে লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়েছেন। বৈশ্বিক যোগাযোগ ভেঙে পড়ায় আমদানি-রফতানিও আশঙ্কাজনকভাবে সীমিত হয়েছে। শিল্পোৎপাদনে দেখা দেয় স্থবিরতা। তবে শিল্প ও সেবা খাতে স্থবিরতা দেখা গেলেও দেশের অর্থনীতির অন্যতম শক্তি কৃষির ওপর তার বিশেষ কোনো প্রভাব পড়েনি। করোনাকালেও স্বাভাবিকভাবে চলেছে কৃষি খাতের কর্মকান্ড। প্রধান প্রধান ফসল, গবাদিপশু, মাছের উপাদন ও বিপণনে কোনো বাড়তি সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়নি। আর সে কারণেই দেশের ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে তেমন কোনো চাপ পড়তে দেখা যায়নি। তাই ভেঙে পড়েনি গ্রামীণ অর্থনীতি। বাস্তবতার নিরীখে ভেঙেপড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলার ক্ষেত্রে এটাই আমাদের প্রধান শক্তি, যা আমরা হারাইনি। জমা হয়ে আছে এফডিআরে। যদিও ঘূর্ণিঝড় আম্পান, জুলাই থেকে আগস্টের অতিবৃষ্টি, পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢল ও নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা এবং নদীভাঙনের কারণে কৃষিতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে এ দেশে এটি একটি নৈমিত্তিক ঘটনার মতো। প্রতি বছরই এ দুর্যোগ মোকাবিলা করেই বেঁচে আছে এ দেশের মানুষ। এতকিছুর পরেও কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশ কখনো ব্যারোমিটারের নিচে নামেনি।
শিল্পের একটি প্রধান উৎসের নাম গার্মেন্ট। এখানেও বাধার পরিমাণ কমে এসে রফতানির মাত্রা ঊর্ধ্বমুখী এবং আশাপ্রদ। অন্যান্য শিল্পেরও চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথে বিদেশি বিনিয়োগ। সুতরাং আমরা বলতেই পারি, অর্থনীতির গতি ভালোর দিকেই। এখন এই গতিকে ধরে রাখাটাই মূল। সে জন্য প্রয়োজন সততা। কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে এই সততার নিদর্শন রাখা আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বদা সজাগ থাকা। আর এ কাজের সফলতার মধ্যেই নিহিত রয়েছে অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়ন।
পিডিএসও/হেলাল