সম্পাদকীয়

  ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সত্য বেরিয়ে আসছে, মানবতা জিতবেই

সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে বেশি দিন আটকে রাখা যায় না। এক দিন না এক দিন তা প্রকাশ পায়। কথায় বলে, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। রোহিঙ্গাদের ওপর যে অমানবিক নির্যাতন হয়েছে তাকে ভাষায় বর্ণনা দেওয়া সম্ভব নয়। এককথায়, রাখাইনে যা হয়েছে তাকে গণহত্যা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। বিশ্বসম্প্রদায় ব্যাপক অনুসন্ধান চালানোর পর গণহত্যার কথা স্বীকার করে বলেছেন, সেখানে যে গণহত্যা হয়েছে, সে দায় মিয়ানমারকে বহন করতে হবে। এ ছাড়া যে লাখ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাকে যথাযথ সম্মান দিয়ে নিজভূমিতে ফিরিয়ে নিতে হবে।

প্রথম দিকে মিয়ানমার প্রকৃত সত্যকে ধামাচাপা দিতে অনেক কসরত করেছে। কিন্তু কালপরিক্রমায় তা ধোপে টেকেনি। সত্য বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ওপর বিশ্বসম্প্রদায়ের চাপ বাড়তে থাকায় তারা ব্যাকফুটে খেলতে থাকে। সে খেলা এখনো থামেনি। মুখে তারা সমাধানের কথা বললেও তাদের অবস্থান থেকে মিয়ানমার এক ইঞ্চিও সরেনি। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে অনেকবার ইতিবাচক কথা বললেও কার্যত তারা নেতিবাচক অবস্থানে থেকেছে। সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। বাংলাদেশকে এখন ১১ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর চাপ বহন করতে হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ মানবতার কথা বিবেচনায় রেখে এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছিল।

বেশ দেরিতে হলেও একটি সত্য আজ বিশ্ববাসীর সামনে এসেছে। যে সত্যটি গণহত্যা প্রশ্নে মিয়ানমার সরকারের অপকর্মের এক জীবন্ত দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী যে নৃশংসতম গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ চালিয়েছিল; তার অকাট্য প্রমাণ মিলেছে। নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) এক শুনানিতে মিয়ানমারের দুই সেনাসদস্য স্বীকার করেছেন যে, ওই অভিযানের সময় রোহিঙ্গাদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। স্বীকারোক্তিতে রাখাইনে ওই সময় তারা কীভাবে একের পর এক রোহিঙ্গাদের গ্রাম ধ্বংস, হত্যা, গণকবর ও নারীদের ধর্ষণ করেছে; তারও বর্ণনা দিয়েছে। যে দুই সেনাসদস্য এই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তাদের নাম মিও উই তুন ও জ্য নায়েং তুন। গত আগস্টে এই দুই সেনা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বিদেশে আশ্রয় নেন। পরে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় গত সোমবার তাদের হেগের আদালতে হাজির করা হয়। সেখানেই তারা এ স্বীকারোক্তি দেন।

স্বীকারোক্তিতে মিও উন তুন জানিয়েছেন, তিনি কেবল তার কমান্ডারের নির্দেশ পালন করেছেন। ওই সময় তাদের নির্দেশে তিনি ৩০ রোহিঙ্গা হত্যায় অংশ নিয়েছিলেন। পরে লাশগুলো সেল টাওয়ার ও সামরিক ঘাঁটির পাশে গণকবর দেওয়া হয়। অন্যদিকে জ নায়েং তুন জানিয়েছেন, কমান্ডারদের নির্দেশে তার দল রাখাইনে প্রায় ২০টি রোহিঙ্গা গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। পরে শিশু ও বয়স্কদের মৃতদেহ গণকবর দেওয়া হয়েছে। তারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ১৯ সেনা কর্মকর্তার নামও উল্লেখ করেছেন।

হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে এই দুই সেনাসদস্যের সাম্প্রতিক উপস্থিতি রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধসহ অন্যান্য গুরুতর অপরাধের বিচারের পথে বড় টার্নিং পয়েন্ট হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে আইসিসির প্রসিকিটরের চলমান তদন্তে বড় ধরনের অগ্রগতি এনে দিতে পারে মিয়ানমারের এই দুই সেনাসদস্যের স্বীকারোক্তি। সঙ্গে সঙ্গে মিয়ানমারের ওপর বিশ্বসম্প্রদায়ের চাপ আরো ঘনীভূত হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা একটি ইতিবাচক সমাধানের দিকে এগিয়ে যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সত্য,মানবতা,সম্পাদকীয়,রোহিঙ্গা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close