সম্পাদকীয়
নদী খননকাজের গতি বাড়ানো দরকার
পলি জমে নৌ-চলাচল বন্ধের উপক্রম। আর সে কারণেই বন্ধের উপক্রম হওয়া নদীগুলোকে খননের মাধ্যমে সচল করার উদ্যোগ নেয় সরকার। দেখভালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। লক্ষ্য ছিল এসব বন্ধ হয়ে যাওয়া চ্যানেলের নাব্য ফিরিয়ে এনে কার্গোসহ সব ধরনের নৌযান চলাচলের স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে আনা। এ লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ নৌপথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ২৪টি নৌপথের নাব্য ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে নেওয়া (২০১২ সাল) এ প্রকল্পের কাজ আগামী জুনেই শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না। ১০ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের ৯ বছর অতিবাহিত হলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৯টি নদীর খনন কর্ম। সামনে যেটুকু সময় আছে তাতে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। ২৪টির মাঝে ৯টি। তাও আবার ৯ বছরে! তবে চলমান রয়েছে কিছু নদীর খনন কাজ।
সামনে শীত। সে কারণেই নদী খননের জন্য সময়টা তুলনামূলক বিচারে অনুকূলে। সামনের ৬ মাসে কাজের গতিকে যদি আন্তরিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে কিছুটা হলেও মুখ রক্ষা হতে পারে। আর এই মুখ রক্ষার জন্য সরকারের কঠোর ভূমিকারও প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজনটা এ কারণেই যে, প্রভাবশালীদের নেতিবাচক ভূমিকা কাজ এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশ কিছু নৌপথের খননকাজ স্থানীয় প্রভাবশালীদের উসকানি ও ইন্ধনে বন্ধ হয়ে যায়। আবার মাটি ব্যবস্থাপনা সমস্যার কারণেও দু-একটি নদী খননকাজে বিঘ্ন ঘটছে। এ ছাড়া করোনা প্রভাবের কারণে বরাদ্দ ছাড়ে বিলম্বকেও ধীরগতির একটি কারণ বলা হচ্ছে। এ রকম নানাবিধ বাধাবিপত্তির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সংশয় রয়েছে। সংশয় আমাদেরও। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ার পেছনে কী এ কারণগুলোই সব! এখানে কি সংশ্লিষ্টদের কোনো অবহেলা ছিল না? আন্তরিকতা এবং সততার উপস্থিতিতে ছিল না কোনো ঘাটতি? ১০ বছরের ৯ বছর চলে গেছে। কাজ হয়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশের মতো। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সংশ্লিষ্টরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
তথ্যমতে, কাজের গতি স্লথ হওয়ার অন্যতম কারণ প্রভাবশালীদের অনৈতিক হস্তক্ষেপ। রাজধানীর চারপাশের নদীর অবৈধ উচ্ছেদ চলাকালে প্রভাবশালীদের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা এসেছিল। তখন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছিলেন, সরকারের চেয়ে প্রভাবশালী কেউ নেই। আমরাও মন্ত্রী মহোদয়ের এ কথার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন কতটুকু? আমরা প্রতিফলন দেখতেই ভালোবাসি। সরকারের সামর্থ্যরে প্রতি দেশবাসীর আস্থা আছে বলেই এ সরকারের প্রতি সমর্থন বারবার ফিরে এসেছে। নদী খনন কার্যক্রমেও সরকার সফল হবে—এটাই সাধারণ মানুষের বিশ্বাস। প্রভাবশালীদের প্রভাব বালির বাঁধের মতো ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়বে এবং সমাজ থেকে দুর্বৃত্তরা উৎখাত হবে—এটাই প্রত্যাশা।
পিডিএসও/হেলাল