সম্পাদকীয়

  ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০

পাটচাষিদের হাসি অম্লান থাকুক

পাট ছিল এ দেশের কৃষকের স্বপ্নের ফসল। বিশ্বেও ছিল ব্যাপকভাবে সমাদৃত। যে কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় এই খাতকে বলা হতো সোনালি আঁশ। সময়ের বিবর্তনে পাটের সেই ঐতিহ্য আজ লুপ্তপ্রায়। দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রের শিকার পাটের জীবনে বিশাল পরিবর্তন ঘটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে পাটের সমাদর যখন আবার বাড়ছে, ঠিক তখনই দেশে পাটকে গুরুত্বহীন করতে একটি কুচক্রী মহল নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।

আশার কথা, পাটের গুরুত্ব অনুধাবন করে বর্তমান সরকার পণ্যটির সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তার ফলও পেতে শুরু করেছেন পাটচাষিরা। এরই মধ্যে পাট বাজারে এসেছে। দামও বেশ চড়া, প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকায়। এতে চাষিরা খুশি।

আমরা বিশ্বাস করি, দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ খাতকে লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতে সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। যা দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে। বিশ্বব্যাপী চলমান মহামারির নেতিবাচক প্রভাব পাটশিল্পেও পড়েছে। তার পরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় উদ্যোগে বিপর্যস্ত পাটচাষিরা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। সোনালি আঁশের রুপালি ফলনে ভরে উঠেছে এ দেশের সবুজ প্রান্তর।

গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে ‘পাটের দামে চাষির মুখে হাসি’ শীর্ষক বিশেষ প্রতিবেদনে প্রকাশিত হলো সোনালি আঁশের সেই উত্থানের বার্তা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতবারের তুলনায় এবার পাটের উৎপাদন ২০-২৫ শতাংশ কম হয়েছে। কিন্তু তাতে কী? বরং গতবারের তুলনায় এবার পাটের দাম রয়েছে দ্বিগুণ। ফলে উৎপাদন কম হলেও পুষিয়ে যাবে কৃষকের খরচ। ফুটবে কৃষকের মুখে সোনালি হাসি। এবার পাট চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্র ছিল খুলনায় ৭ হাজার ৫০০, বাগেরহাটে ৪ হাজার ৪০০ এবং সাতক্ষীরায় ৩৯ হাজার একর। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে খুলনায় ৩৩ হাজার ৭৫০ বেল (প্রতি বেলে পাটের পরিমাণ ১৮২.২৫ কেজি), বাগেরহাটে ২২ হাজার ৭২৫ বেল এবং সাতক্ষীরায় ১ লাখ ৯৮ হাজার বেল। গত বছর পাটের দাম ছিল প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এবার মানভেদে সেই পাটের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। তার পরও কৃষকের পুষিয়ে যাবে ভালো দামের জন্য। এরই মধ্যে পাট ক্রয় শুরু করেছেন ব্যাপারীরা। ফলে চাষিরা লাভজনক দামে পাট বিক্রি করে বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছেন। পাশাপাশি নতুন ফসল বোনার স্বপ্নে বিভোর চাষিদের শ্রমে ঘামে আবার সিক্ত হবে ফসলের মাঠ।

স্বাধীনতার পরপর পাট ও পাটজাত দ্রব্য থেকে রফতানি আয়ে ৮৭ শতাংশ আসত, যা আজ সিঙ্গল ডিজিটে রূপান্তরিত হয়েছে। আশা করা যায়, মহামারি-উত্তর দেশে পাটশিল্প নিয়ে সরকার নতুন ভাবনায় আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হবে। দেশের ঐতিহ্যের হাতে হাত রেখে পরিবেশবান্ধব এ বৃহৎ শিল্পের দিকে নতুনভাবে নজর দেবে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী মানুষ পরিবেশ সচেতন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পলিথিনকে সরিয়ে পাটকে সামনে নিয়ে আসছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশের সোনালি আঁশ আবার বিশ্বখ্যাত হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পাটচাষি,সম্পাদকীয়,সোনালি আঁশ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close