সম্পাদকীয়

  ০৬ আগস্ট, ২০২০

প্রাথমিকে ঝরে পড়া রোধে সচেতনতা জরুরি

প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া একটি বড় সমস্যা। কিন্তু সরকারের নানা প্রচেষ্টায় ক্রমেই প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি যুগান্তকারী সাফল্য। ২০২১ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে যে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ, তার অন্যতম শর্ত শিক্ষা ও মানবসম্পদের উন্নয়ন। আর সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে সরকার। ফলে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রায় শতভাগে পৌঁছেছে। কারণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমেছে ঝরে পড়ার হার। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশিক্ষিত শিক্ষকমন্ডলী, বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া ও উপবৃত্তিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা চালু রাখায় প্রাথমিক শিক্ষায় এমন সাফল্য এসেছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সবশেষ জরিপ অনুযায়ী ২০১৯ সালে প্রাথমিকের ১৭ দশমিক ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি ঘটেছে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির মধ্যেই। এর মধ্যে ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ ছাত্র ও ১৫ দশমিক ৭০ শতাংশ ছাত্রী। ছাত্রীদের থেকে ছাত্রদের ঝরে পড়ার হার ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। আগে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের উপবৃত্তি দিত সরকার। ২০১৫ সাল থেকে কয়েকটি শর্তে ছাত্রীদের সঙ্গে সব ছাত্রকেও উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। এখন প্রাথমিকের ১ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাচ্ছে। গণসাক্ষরতা অভিযানের রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ছাত্রীদের সঙ্গে এখন ছাত্রদের উপবৃত্তি দেওয়া হলেও এর সুফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে। আগে থেকে উপবৃত্তি না পাওয়ায় ছেলেদের ঝরে পড়ার হার বেশি বলে মত দিয়ে তিনি বলেন, মূল ধারার সব বিদ্যালয় এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির আওতায় আনতে হবে। কারণ সুবিধাবঞ্চিতরাই উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় পড়াশোনা করে কিন্তু তারাই উপবৃত্তি পাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার আরো কমাতে উপবৃত্তির পরিধি বাড়াতে হবে। এছাড়া এখন যেভাবে ঝরে পড়ার হার নির্ধারণ করা হচ্ছে, তা থেকে বের হয়ে অন্যভাবে এই হার কীভাবে নির্ধারণ করা যায় সে বিষয়ে কাজ করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আছে, তা সত্ত্বেও এক্ষেত্রে বাংলাদেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়েছে। তবে এখনো গুণগতমান বাড়েনি। এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা আশা করি, সরকার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হবে। আর তা থেকে উত্তরণ না ঘটলে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে।

প্রাথমিক শিক্ষার মান্নোয়নে সরকার অনেক ইতিবাচক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তারপরও শুধু অভিভাবকদের খামখেয়ালিপনায় অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীর জীবন। এই বিষয়টিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি লেখাপড়ার মান আরো উন্নত করতে হবে। বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। এসবের কারণ খতিয়ে দেখতে হবে। বিদ্যালয়ে শিশুদের শেখার পদ্ধতি যাতে আরো আনন্দময় হয়, সেই বিষয়টিও বিবেচনায় এনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারি উদ্যোগে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার অনেক কমেছে। তেমনি এই ধারাবাহিকতা রক্ষায় সরকার তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে—এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সচেতনতা,প্রাথমিক,ঝরে পড়া,সম্পাদকীয়,শিক্ষা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close