সম্পাদকীয়

  ২৭ জুলাই, ২০২০

প্রবাসীদের স্বার্থরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে

করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিশ্ব যখন দিশাহারা, অর্থনীতি যখন মন্দার তলানিকে স্পর্শ করেছে; ঠিক সে মুহূর্তে বাংলাদেশের কতিপয় দুর্বৃত্ত করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা না করে ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। বিদেশে চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য যখন প্রবাসী শ্রমিকরা দেশ থেকে যাত্রা করে বিদেশের এয়ারপোর্টে উপস্থিত হন; তখন তাদের করোনা টেস্টের মধ্য দিয়ে উপযুক্ততা প্রমাণ করতে হয়। কিন্তু সেখানে পরীক্ষার পর বেশির ভাগ প্রবাসী শ্রমিকের রিপোর্ট দেশ থেকে পাওয়া ছাড়পত্রের বিপরীত ফলাফল পাওয়া যায়। ফলে তাদের সেই দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। ফিরতি বিমানে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ রকম ভুয়া সার্টিফিকেটের সংখ্যা স্বল্প কিছুর মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। সংখ্যা হাজারে হাজার। এরই মধ্যে সরকারের ত্বরিত হস্তক্ষেপের ফলে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়াধীন। এ পর্যন্ত এসব দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রমাণ হলে গুরুদন্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তাদের এই অনৈতিক কর্মকান্ডে বাংলাদেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কোনো কিছু দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। বিদেশে বাংলাদেশের সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। আর প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা পড়েছেন চরম বিপাকে।

দেশে আসতে করোনা পরীক্ষার সনদ না লাগলেও বাংলাদেশ ত্যাগ করতে এই সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিদেশগামী ব্যক্তিদের সনদ সংগ্রহের জন্য দেশের ১৪টি জেলায় করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে সনদ পেতে দিতে হচ্ছে ১৭ গুণ অতিরিক্ত ফি; যা কোনোক্রমেই দেশের স্বার্থের অনুকূলে নয়। প্রবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা করে ভাবতে হবে। কেননা, এই শ্রমিকরাই দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তির একটি অন্যতম বাহক। তাদের ওপর বাড়তি চাপ না দেওয়াটাই হবে মানবিক আচরণ। আশা করি কর্তৃপক্ষ বিষয়টির প্রতি সদয় বিবেচনায় এগিয়ে আসবে। এ ছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশ বিমানবন্দর ব্যবহার করে দেশের ভেতরে বা বাইরে যেতে হলে যাত্রীদের দিতে হবে যাত্রী নিরাপত্তা ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি। সব মিলিয়ে প্রবাসী কর্মীদের বিদেশ যেতে বেড়েছে বাড়তি চাপ ও ভোগান্তি।

তথ্যমতে, গত ১২ জুলাই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিদেশ গমনেচ্ছু যাত্রীদের কোভিড-১৯ মুক্ত সনদ নিয়ে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ১৯ জুলাই বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২৩ জুলাই থেকে আকশপথে বিদেশ গমনকারী সব এয়ারলাইনসের যাত্রীদের কোভিড পরীক্ষার সনদ বাধ্যতামূলক। কোভিড-১৯ পরীক্ষার বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়। বিদেশগামী যাত্রীকে বিমানযাত্রার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নমুনা জমা দিতে হবে। যেকোনো ব্যক্তির জন্য করোনা পরীক্ষার নির্ধারিত ফি ২০০ টাকা। কিন্তু বিদেশগামী যাত্রীদের সশরীরে ল্যাবে গিয়ে পরীক্ষার জন্য দিতে হবে ৩৫০০ টাকা এবং বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করলে ফি দিতে হবে ৪৫০০ টাকা। এ ছাড়া দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে মাত্র ১৪টি জেলায় বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষার স্যাম্পল নেওয়া হবে।

এখানেও বিদেশগামীরা বেশ কিছুটা বাড়তি সংকটে পড়বেন। এমনিতেই বিদেশফেরত প্রবাসীরা বর্তমানে সংকটে আছেন। এর ওপর টেস্টের যে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা তাদের জন্য অনেক বেশি। শুধু টেস্ট নয়, যাতায়াত মিলিয়ে এক একজনের ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হবে; যা কিছুটা হলেও অমানবিকতার আওতায় পড়বে বলেই অনেকের ধারণা। আমরা মনে করি, বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। আশা করি, এ দুর্যোগময় মুহূর্তে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কর্তৃপক্ষ বিদেশগামীদের পাশে দাঁড়াবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রবাসী,স্বার্থরক্ষা,সম্পাদকীয়,কোভিড-১৯
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close