সম্পাদকীয়

  ২৬ জুলাই, ২০২০

রুখতে হবে সমুদ্র দূষণ

ধর্মীয় মতে, ‘সীমা লঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না’। বাক্যটিকে কোনো ধর্ম বা বিজ্ঞানও অস্বীকার করে না। সবাই এ বাক্যের সঙ্গে একবাক্যে একাত্ম ঘোষণা করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা বাক্যটির বিপরীতে মতামত প্রকাশ না করলেও কার্যক্ষেত্রে বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করি; যার ফলে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনি। নিজেদের অনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে ইতোমধ্যেই আমরা প্রকৃতির সর্বনাশের মধ্য দিয়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে এনেছি। সীমা লঙ্ঘনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় চলমান বন্যার কথা ধরা যেতে পারে। আমরা প্রকৃতিকে শাসন এবং নিজের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে গিয়ে নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীর স্বাভাবিক সত্তার ওপর অন্যায়ভাবে আঘাত করেছি। প্রকৃতি তা মেনে নেয়নি। রিভোল্ট করেছে। আর সে কারণেই বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। আগামীতে এর ভয়াবহতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলেই মতো দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

আমরা এখন করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করছি। বাজারে ওষুধ নেই, ভ্যাকসিনও নেই। তার পরও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। মোকাবিলায় একমাত্র ভরসা আমাদের দেহের অভ্যন্তরে থাকা প্রতিরোধ ক্ষমতা। যাকে আমরা অ্যান্টিবডি হিসেবে জানি। অ্যান্টিবডি সবল না হলে আমরা পরাজিত হই। মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে। বিশ্বে করোনার আক্রমণে এখন পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এই করোনার কারণে। একইভাবে প্রকৃতির দেহেও একটি নির্দিষ্ট মানের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অ্যান্টিবডির অবস্থান রয়েছে। সে নিজে কখনো তার এই অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে না। নষ্টের মূল কারণ এ মানব সম্প্রদায়। তারাই নানাবিধ অপকর্মের মধ্য দিয়ে কাজটি করে থাকে। আর এ কাজের মধ্য দিয়ে প্রকৃতিও তার প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাতে থাকে। নেমে আসে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এতে প্রকৃতিই যে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা হয়েছে আমাদের মানব সম্প্রদায়। তার পরও হুঁশ হয়নি। প্রকৃতি ও পরিবেশ নষ্ট করার কাজ অব্যাহত রয়েছে।

এত দিন নষ্ট করেছি মাটি ও বাতাস। এবার যুক্ত হয়েছে পানি। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি সরকার ও কোম্পানিগুলো উল্লেখযোগ্য হারে প্লাস্টিক উৎপাদন হ্রাস না করলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে সমুদ্রে ভাসমান প্লাস্টিকের পরিমাণ তিন গুণ বেড়ে যাবে। বাড়বে সামুদ্রিক প্রাণী ধ্বংসের পরিমাণ। ইন্টারন্যাশনাল সলিড ওয়েস্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, করোনাভাইরাস মহামারিকালে একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া মাস্ক ও গ্লাভসসহ প্লাস্টিকসামগ্রী সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। এতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সমুদ্র দূষণ। দ্য জার্নাল সায়েন্স গবেষণা বলছে, যদি জরুরিভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে প্রতি বছর ১১ থেকে ১৯ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ সমুদ্রে পতিত হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে অতিরিক্ত আরো ৬০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক সমুদ্রে চলে যাবে। পিউ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপক ও গবেষক উইনি লাউ বলেছেন, প্লাস্টিক দূষণ হলো এমন একটি বিষয় যার প্রভাব সবার ওপরে পড়ে। এটা কোনো নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়। সমস্যা সবার। আমরা যদি কিছু না করি, তাহলে এই সমস্যা আরো ভয়াবহ হবে।

আমরা আর কোনো ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে চাই না। আর সে কারণেই এর একটি ইতিবাচক সমাধান চাই। সমাধানে জন্য এ যাবত যে গবেষণা হয়েছে তা দিয়েই আবর্জনা মুক্ত হওয়া সম্ভব। প্রয়োজন কেবল একটি সঠিক সিদ্ধান্তের। প্রকৃতিকে রক্ষা করাই এখন মূল কাজ। বিনষ্ট করা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। অন্যথায় এক দিন এই পৃথিবী বসবাসের জন্য সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়বে। তখন আমাদের আর কিছুই করার থাকবে না।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সমুদ্র দূষণ,সম্পাদকীয়,করোনাভাইরাস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close