সম্পাদকীয়
গৃহহীন থাকবে না কেউ ঘোষণাকে স্বাগত
তিনি পারেন। পারেন বলেই এত দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পেরেছেন। ইচ্ছাশক্তি প্রবল হলে মানুষ কি না করতে পারে। একসময়ের বটমলেস বাস্কেট হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ বিশ্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন তারা কী করতে পারেন। আজ আর সেই বাংলাদেশ নেই। আজ বিশ্বের অনেক দেশের ঈর্ষার কারণ এই পাললিক ভূমি। ইচ্ছাশক্তিই বাংলাদেশকে এ পর্যায়ে উন্নীত করেছে। আমরা আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। করোনার আগ্রাসন কিছুটা পেছনে টেনে রাখলেও আমাদের ইচ্ছাশক্তির কাছে এই আগ্রাসন পরাভূত হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। বন্যা এ দেশে নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই এ দুর্যোগ মোকাবিলা করেই এ দেশের মানুষ বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সাফল্যের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে তাদের মাতৃভূমিকে। ইচ্ছাশক্তিই তাদের এনে দিয়েছে এ সফলতা।
সেই ইচ্ছাশক্তির ওপরে দাঁড়িয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না’। সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর তৈরি করে গৃহহীনদের হাতে মালিকানা হস্তান্তর করছে। পাশাপাশি যাদের জমি আছে, তাদের ঘর করে দেওয়ার জন্য গৃহায়ন তহবিল নামে বাংলাদেশ ব্যাংককে একটি তহবিল গঠন কর হয়েছে। সেখান থেকে যে কেউ টাকা নিয়ে ঘর বানাতে পারবেন। এ ছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমেও যাদের জমি আছে, ভিটা আছে কিন্তু ঘর নেই তাদেরও ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের খুরুশকুলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে বিমানবন্দর লাগোয়া সমুদ্র-তীরবর্তী এলাকায় উদ্বাস্তু জীবন কাটানো ৬০০ পরিবার পেল নতুন স্থায়ী ঠিকানা। খুরুশকুলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে তারা বুঝে পেলেন নতুন ফ্ল্যাট।
এ প্রকল্প উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকারের লক্ষ্য বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। সহায়হীন প্রত্যেক মানুষের জন্য সরকার গরিবি হালে হলেও মাথা গুঁজার ঠাঁই করে দিতে বদ্ধপরিকর। এটাই সরকারের লক্ষ্য। তিনি বন্যা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, পরিস্থিতির ওপর সরকারের নজর আছে। এবার বন্যার প্রকোপ কিছুটা বেশি দেখা যাচ্ছে। শ্রাবণ চলছে, এরপর ভাদ্র মাসের দিকে আরো পানি আসবে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যার প্রকোপ অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বন্যা মোকাবিলার প্রস্তুতি সরকারের আছে। সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে এ কাজ করবে। বন্যায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত বা নদীভাঙনে যারা গৃহহীন হয়ে পড়বে, সরকার তাদের ঘরবাড়ি করে দিয়ে জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দেবে। এ কাজের জন্য আলাদা বরাদ্দও রাখা আছে। বাংলাদেশ এখন একসঙ্গে ত্রিমুখী বিপর্যয়ের মোকাবিলা করছে। সেই বিপর্যয়ের ওউপরে দাঁড়িয়ে সরকারের এ ঘোষণার জন্য কতটা মনোবলের প্রয়োজন হয়, তা সবারই জানা। প্রধানমন্ত্রী সেই মনোবল এবং ইচ্ছাশক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে প্রমাণ করলেন, বাংলাদেশ কখনো কোনো দুর্যোগের কাছে মাথানত করেনি। বারবারই এ দেশের মানুষ টানটান দাঁড়িয়ে এসব দুর্যোগের মোকাবিলা করে দেখিয়েছে সফলতা। প্রধানমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার যে ঘোষণা দিলেন তা সফল হবে। তার ইচ্ছাশক্তির কাছে পরাভূত হবে সব বৈরী অশুভশক্তি এটাই আমাদের বিশ্বাস।