সম্পাদকীয়

  ২৪ জুলাই, ২০২০

দীর্ঘস্থায়ী বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি দরকার

বিপর্যয় যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। একটার পর একটা আসছেই। থামার কোনো লক্ষণ নেই। তবু মানুষ লড়ছে। এখনো পরাজিত হয়নি। মেনে নেয়নি পরাজয়। তাই তো বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে এখনো দাঁড়িয়ে আছে এবং আগামীতে তা অব্যাহত রাখবে বলেই সবার বিশ্বাস। একদিকে সর্বগ্রাসী করোনাভাইরাস ও অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো এক বিপর্যয় বন্যা। তবে এ দেশের মানুষ বন্যাকে এত দিন তাদের জীবনযাপনের অংশ হিসেবেই মেনে নিয়ে মোকাবিলা করেছে। সফল হয়েছে। তবে এবারের বন্যা তার রূপ পাল্টে কিছুটা ভয়ংকর আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর সে কারণেই বাংলাদেশকে একসঙ্গে ত্রিমুখী আক্রমণ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। একদিকে করোনা, সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে ভয়াবহ দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। তাই প্রয়োজন আগাম চিন্তা ও পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি।

১৯৮৮ সালের পর বাংলাদেশে এবারের বন্যা আরো দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। দেশে বন্যার পানি এখনো বাড়ছে। আগামী মাসের আগে কমবে এমন সম্ভাবনাও কম। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্সের (ওসিএইচ) নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। ওসিএইচ জানিয়েছে, বন্যায় এখন পর্যন্ত দেশের ১৮টি জেলার ২৪ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে অন্তত ৫৬ হাজার মানুষ। দেশে বন্যার প্রভাবে এ পর্যন্ত অন্তত ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ বাড়িঘর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁধ ও বাঁধের মতো বন্যানিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো। সরকার ইতোমধ্যেই সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। সরকারকে সহযোগিতা করছে জাতিসংঘ ও মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাসমূহ। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোর সহায়তার জন্য জাতিসংঘ তার বিভিন্ন সংস্থাকে প্রাথমিকভাবে ৫২ লাখ মার্কিন ডলারের অনুদান দিয়েছে। দেশবাসীর পক্ষ থেকে জাতিসংঘের এই মানবিক আচরণের জন্য রইল আন্তরিক সাধুবাদ।

১৯৮৮ সালের বন্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। সে সময় আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে হওয়া বন্যায় দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। স্থায়িত্ব ছিল ১৫ থেকে ২০ দিন। তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি প্রচার পায়। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট আমাদের অনুকূলে নয়। করোনাভাইরাসের আগ্রাসন ঠেকাতেই পৃথিবী আজ ব্যস্ত। বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থাও নাজুক। সবাই যেন নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। এর মধ্যে থেকেই আমাদের লড়াই। তাই একটু বাড়তি চিন্তা ও পরিকল্পনার প্রয়োজন। তবে সবার আগে আমাদের বোধকে জাগ্রত করা দরকার। বিগত ৪০ বছরে আমরা দেশের কাছ থেকে অনেক নিয়েছি। কিন্তু দিয়েছি কতটা! দেশ আমাদের দিয়েছে অনেক। কিন্তু আমরা তার প্রতিদানে কতটুকু দিয়েছি। হিসাব করলে যা দাঁড়াবে, ‘কিছুই পারিনি দিতে’। তাই এটাই সুযোগ, সমর্থবানরা এগিয়ে এলে দুর্যোগ মোকাবিলা অনেকটা সহজ হবে। দেশ উপকৃত হবে। আমরাও মানবিকতার বিচারে উত্তীর্ণ হব।

বন্যায় শুধু আমরাই আক্রান্ত হইনি। করোনাভাইরাস মহামারি ও তার ফলে সৃষ্ট আর্থিক সংকটের মধ্যে মৌসুমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ত্রিমুখী মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়া। যেখানে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে ৯৬ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রাণহানির সংখ্যা ৫৫০। সমস্যাটা উজানে থাকা দেশসমূহের নদীর ওপর অনৈতিকভাবে আন্তর্জাতিক নদী আইন অমান্য করে বাঁধ নির্মাণ। বিষয়টি এত দিন বাংলাদেশ উত্থাপন করলেও আজ সবার মুখ থেকে একই বাক্য উচ্চারিত হচ্ছে। তাই এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরা মনে করি, সময়ের এই ন্যায্য দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে সব সরকারপ্রধান এগিয়ে আসবেন এবং ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ দুর্যোগমুক্ত হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বন্যা মোকাবিলা,সম্পাদকীয়,করোনাভাইরাস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close