নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০১ ডিসেম্বর, ২০২২

বিশ্ব এইডস দিবস আজ

এইচআইভি সংক্রমণের উচ্চঝুঁকিতে বাংলাদেশ

দেশে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। এইচআইভি রোগীদের মধ্যে সাধারণ মানুষ, সিরায় মাদক গ্রহণকারী ও প্রবাসী শ্রমিকের হার বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে এ পর্যন্ত এইডস রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৭৬১ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৫৮৮ জনের। মৃত্যুর হার ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস দিবস। দিবসটির এবারের মূল প্রতিপাদ্য ‘Putting ourselves to the Test : Achieving Equality and End HIV.’ সহজ বাংলায় বলতে গেলে সবাইকে টেস্টের আওতায় আনতে হবে। সমতা অর্জন করে এইচআইভি শেষ বা নির্মূল করতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জন্য অসমতা দূর করে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। অসাম্যের সমাপ্তি না ঘটাতে পারলে এইচআইভি শেষ বা নির্মূল করা যাবে না।

এদিকে, জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত ৩ বছরে শিশু, কিশোর-কিশোরী ও গর্ভবতী নারীদের মধ্যে ঘাতক ব্যাধি এইডসের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি।

ইউনিসেফের শিশু, এইচআইভি ও এইডস-সংক্রান্ত সর্বশেষ বৈশ্বিক স্ন্যাপশট প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার শিশু ও কিশোর-কিশোরী (০-১৯ বছর বয়সি) এইডসজনিত কারণে মারা গেছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে আরো ৩ লাখ ১০ হাজার। ফলে ১৯ বছরের কম বয়সিদের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখে উন্নীত হয়েছে।

ইউনিসেফের এইচআইভি-এইডসবিষয়ক সহযোগী প্রধান মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) এক বার্তায় আনুরিতা বেইনস বলেন, যদিও এইডসের চিকিৎসা ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে কম প্রাধান্য পাচ্ছে, তবু গত ৩ বছরে এ বিষয়ে যে স্থবিরতা দেখা গেছে, তা নজিরবিহীন। ফলে অনেক কম বয়সি মানুষ নতুন করে অসুস্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়েছে। প্রতিদিন ৩ শতাধিক শিশু ও কিশোর-কিশোরী এইডসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছে।

তবে, সরকারের গৃহীত কর্মসূচির আওতায় এইডস রোগীদের চিকিৎসার আওতা বাড়ছে। নেওয়া হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। আশা করা হচ্ছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হলে ২০৩০ সাল নাগাদ ৯৫ শতাংশ এইডস রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা যাবে।

প্রাণঘাতী এ রোগ নিরাময়ে সরকারকে আরো বেশি পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। শনাক্তকরণ পরীক্ষা এবং আওতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। বিশেষ করে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী, অভিবাসী, পুশব?্যাক হওয়া লোকজন এবং এইডসপ্রবণ এলাকাগুলোর দিকে বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন। করোনা পরীক্ষার মতোই সীমান্ত এলাকায় সবাইকে এইচআইভি টেস্টের আওতায় আনার পক্ষেও মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশে এইডস আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। নতুন রোগীদের বড় অংশই অভিবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্য। আগে ঝুঁকিপূর্ণ চার ধরনের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন রোগী বেশি পাওয়া গেলেও গত বছর সাধারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ বেড়েছে।

সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সর্বশেষ শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬ হাজার ১০৪ জনকে চিকিৎসা সুবিধার আওতায় আনা গেছে। বাকি ১ হাজার ১২৫ জন সংক্রমিত ব্যক্তি এখনো চিকিৎসার বাইরে আছেন। নতুনভাবে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে শনাক্ত হয়েছেন ২১৮ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১২৭ জন, খুলনায় ৪, সিলেটে ৪৫, বরিশালে ২৮, রাজশাহীতে ২৭ এবং ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে ১৫ জন করে শনাক্ত হয়েছেন।

নতুন আক্রান্তদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এইডস রোগীদের ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে, ৭৪ দশমিক ২০ শতাংশ ২৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে, ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ ১৯ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে এবং ২ দশমিক ০৭ শতাংশ ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।

পিডিএস/মীর

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিশ্ব এইডস দিবস,বাংলাদেশ,এইচআইভি,সংক্রমণ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close