ডা. আয়েশা হান্না

  ২৫ মে, ২০২৩

মনোবিক্ষিপ্ততা কেন হয়, কীভাবে কমাবেন

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

কোনো কাজ করতে বসেছেন, এমন সময় সামনের মোবাইল ফোনের নোটিফিকেশন বেজে উঠল। কী নোটিফিকেশন; তা দেখতে গিয়ে কীভাবে যেন অনেকটা সময় ফোনের পেছনেই চলে গেল! যেই সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করবেন ভেবেছিলেন, তা আর করতে পারলেন না। অথবা মিটিংয়ে আছেন, কিন্তু কথা শুনতে শুনতে কখন মন অন্য দিকে চলে গেছে, তা টেরই পেলেন না! এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা শুনতে পারেননি।

মনোযোগ প্রয়োগের সময় মনের এই বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়াই ডিসট্র্যাকশন বা মনোবিক্ষিপ্ততা।

মনোবিক্ষিপ্ততা দুই প্রকার। হতে পারে বাহ্যিক কোনো কারণে অথবা নিজের মনোযোগের অভাবের কারণে।

প্রথম ঘটনায় মোবাইল ফোন অর্থাৎ, কোনো বাহ্যিক কারণে আপনি ডিসট্র্যাক্টেড হয়ে গেলেন। কিন্তু, দ্বিতীয় ঘটনায় বাহ্যিক কোনো উপকরণ ছাড়াই আপনি নিজের মনেই ডিসট্র্যাক্টেড হয়ে গেলেন।

মনোবিক্ষিপ্ততার মূল কারণ : ডিজিটাল ডিভাইসের এই যুগে ‘ডিজিটাল ডিসট্র্যাকশন’-ই মনোযোগকে বিক্ষিপ্ত করে দেওয়ার অন্যতম কারণ। আর ক্রমাগত ডিসট্র্যাক্টেড হতে থাকলে, এর পরিণতিতে কমতে থাকে যেকোনো বিষয়ে আপনার মনোযোগ ধরে রাখারই ক্ষমতা।

মনোবিক্ষিপ্ততা কমানোর উপায় : কোনো কাজে একনিষ্ঠ মনোযোগ ধরে রাখার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন-ডিসট্র্যাকশনের কারণ হতে পারে এমন উপকরণগুলো থেকে কাজের সময় যতটা সম্ভব দূরে থাকা। এজন্য নিচের উপায়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।

ক. অগোছালো পরিবেশে মন সহজেই বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তাই পড়ার বা কাজের জায়গাটিকে সবসময় পরিপাটি রাখতে হবে। মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাতে পারে এমন উপকরণগুলো চোখের সীমানা থেকে দূরে রাখা ভালো;

খ. পড়ার সময় বা জরুরি কাজ করার সময় মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে হবে। আর তা সম্ভব না হলে ফোন সাইলেন্ট মোডে অথবা ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ মোডে রাখা যায়। আরও ভালো হয় যদি অন্য কোনো ঘরে ফোন রেখে দিলে;

গ. সকালে ঘুম ভেঙে প্রথমেই স্মার্টফোনে নোটিফিকেশন চেক করার অভ্যাস পরিহার করা উচিত। দিনের প্রথম কাজটাই যখন হয় অন্যের মেসেজ, ই-মেইল বা নিউজ চেক করা, তখন স্বাভাবিকভাবেই ব্যক্তি তাড়না অনুভব করবেন লাইক-কমেন্ট-শেয়ার অথবা রিপ্লাই দেওয়ার। তখন দিন শুরু হয় ডিসট্র্যাকশন ও রি-অ্যাকটিভ আচরণের মধ্য দিয়ে।

ঘ. প্রতিদিন অন্তত কয়েক ঘণ্টা সময় সম্পূর্ণভাবে স্মার্টফোন থেকে দূরে থাকার চর্চা করতে হবে। খুব ভালো হয় দিনের প্রথম ৩- ৪ ঘণ্টা অথবা যেই সময়ে সবচেয়ে কর্মোদ্যম থাকার সময়। যেন সবচেয়ে প্রোডাকটিভ সময়ে আপনি ডিসট্র্যাকশন ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো এগিয়ে ফেলতে পারেন।

ঙ. ডিজিটাল ডিসট্র্যাকশন থেকে মুক্তি পেতে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ফোন থেকে মুছে ফেললে সুফল মেলে। প্রয়োজনে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ ব্যবহার করতে হয় হলে তা ফোনে নয়; বরং কম্পিউটারে ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনীয় অ্যাপ ব্যবহারেও নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে নিলে সময় নষ্ট হয় না।

চ. অন্যের সঙ্গে কথা বলার সময় বা কথা শোনার সময় মোবাইল ফোন চেক করা আদবকেতার পরিপন্থি। ফোন চেক করলে শ্রোতা কিংবা সহকর্মীকে পুরো মনোযোগ ও সম্মান দেওয়া হয় না।

ছ. অফিসে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সময় ব্যস্ত আছেন এমন কোনো সাইন রাখলে কাজের সময় কেউ অহেতুক ব্যাঘাত ঘটাবে না।

জ. কাজের মাঝখানে বার বার ই-মেইল ও নোটিফিকেশন চেক করা ঠিক নয়। ই-মেইল ও নোটিফিকেশন চেক করা বা রিপ্লাই করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখলে সময়ের যথাযথ ব্যবহার সম্ভব।

ঝ. দিনের শুরুতেই সারাদিনের কাজের তালিকা তৈরি করতে হবে। কোন কোন কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেই ক্রমানুসারে কাজগুলোকে সাজিয়ে নেওয়া ভালো। কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো তালিকার শেষের দিকে থাকবে। তালিকার শুরু থেকে মনোযোগ দিয়ে কাজ শুরু করলে গুরুত্বহীন কাজগুলোর ডিসট্র্যাকশন থেকে দূরে থাকা যায়।

ঞ. ডিসট্র্যাকশন কমানোর জন্য মনোযোগ বাড়ানোর কিছু টেকনিকও চর্চা করা যায়। ২ মিনিট মনোযোগের অনুশীলন, কোয়ান্টাম ব্যায়াম ও মেডিটেশন চর্চা ধীরে ধীরে মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান; প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল।

পিডিএসও/এমএ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মনোবিক্ষিপ্ততা,মনোবিক্ষিপ্ততা কেন হয়,ডিসট্র্যাকশন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close