হানজালা শিহাব
সুস্থ থাকতে নিয়মিত ভিনেগার খান
হজমে সমস্যা, পেটে গ্যাস হওয়া, মেদ বেড়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যা দূর করতে নিয়মিত খাবারের পরে আপেল সিডার ভিনেগার বা কোকোনাট ভিনেগার খেতে পারেন। এতে বিস্ময়কর উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়াও শরীরের ওজন, কোলেস্টেরল, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমানোসহ বহু উপকার করে এ ভিনেগার। তবে আপেল সিডার ভিনেগার কেনার সময় অবশ্যই উইথ মাদার লেখা দেখে নিবেন। উইদাউট মাদার নিবেন না।
আপেল সিডার ভিনেগারের ৬ গুণ আপেল সিডার ভিনেগার স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। আসুন জেনে নেই আপেল সিডার ভিনেগারের বিজ্ঞানসম্মত ছয়টি গুণ।
১. এন্টি-অক্সিডেন্ট : আপেল থেকে গাঁজন বা ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি করা। এ ভিনেগারে ৫-৬ শতাংশ অ্যাসেটিক এসিড থাকে। এটি শরীরের জন্য উপকারী। আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট ও খনিজ লবণ।
২. ব্যাকটেরিয়া : পেটের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিধন করতে সাহায্য করে আপেল সিডার ভিনেগার। তাই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত স্থান পরিষ্কার করতে এটি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া নখের ছত্রাক, আঁচিল, উকুন, কানের ইনফেকশন উপশম করতেও এ ভিনেগার ব্যবহার করা যায়। কয়েক হাজার বছর আগে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার জন্য ভিনেগার ব্যবহার করা হতো। খাবার সংরক্ষণ করতেও ব্যবহার করা হয় ভিনেগার। এতে খাবারে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জন্মায় না। প্রাকৃতিকভাবে খাবার সংরক্ষণ করতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন আপেল সিডার ভিনেগার। এছাড়া, ব্রনসহ ত্বকে ব্যাকটেরিয়াজনিত বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে এ ভিনেগার খুব কাজের। তবে ত্বকে দিতে হলে ভিনেগারের সঙ্গে অবশ্যই পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে নিতে হবে।
৩. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ : টাইপ- ২ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য আপেল সিডার ভিনেগার খুবই উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ঘুমানোর আগে মাত্র দুই টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক গ্লাস পানির সঙ্গে মিলিয়ে খেলে, সকালে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ার গতি কমবে চার শতাংশ। যাদের ডায়াবেটিস নেই, তারাও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
৪. ওজন কমানো : ওজন কমাতে সাহায্য করে আপেল সিডার ভিনেগার। শর্করা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর ভিনেগার খেলে দিনের পরবর্তী সময়ে সহজে ক্ষুধা লাগে না। ওবেসিটি বা অতিরিক্ত মুটিয়ে যাওয়া রোগে আক্রান্ত ১৭৫ জনকে নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে, রোজ আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস ওজন কমাতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে কমে পেটের মেদ। তবে অবশ্যই খাবার গ্রহণের পরিমাণও কমাতে হবে। শুধু ভিনেগারই ওজন কমাবে না।
৫. হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর : বর্তমান বিশ্বে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ হৃদরোগ। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। আপেল সিডার ভিনেগার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
৬. ক্যান্সার প্রতিরোধী শক্তি : আপেল সিডার ভিনেগারে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী শক্তি। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এ ভিনেগার ক্যান্সার কোষ নির্মূল ও টিউমার সারাতে ভূমিকা রাখে। তবে এটি এখনো সর্বব্যাপী স্বীকৃত নয়। এ নিয়ে আরো গবেষণা চলছে।
ব্যবহারের পদ্ধতি আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, রান্নায় এ ভিনেগার ব্যবহার করা। ঘরে মেয়োনিজ তৈরির সময় বা সালাদেও দিতে পারেন ভিনেগার। পানির সঙ্গে মিশিয়ে পানীয় হিসেবেও পান করা যেতে পারে এটি। এক্ষেত্রে প্রতিবেলা খাবারের ৩০ মিনিট পর, এক গ্লাস পানিতে ১/২ টেবিলচামচ (৫-১০ মিলিলিটার) আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করতে পারেন। অথবা খাবারের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়া যায়।
তবে পেটে ক্ষত বা আলসার থাকলে আপেল সিডার ভিনেগার পানির সঙ্গে মিশ্রণে খাওয়ার বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আর পানিতে না মিশিয়ে সরাসরি ভিনেগার খাওয়া কখনোই উচিত নয়। এ ভিনেগার রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে, এটা ঠিক। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে খাবার হজম হতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে। একইভাবে কাজ করে কোকোনাট ভিনেগার। তবে তুলনামূলক কোকোনাট ভিনেগার ব্যয়বহুল। কিন্তু আপেল সিডার ভিনেগারে ভেজাল মেশানো হয় অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু কোনোনাট ভিনেগার অর্গানিক। ফলে এটি বেশি কার্যকর।