reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৯ নভেম্বর, ২০২২

বেলের বিস্ময়কর ওষুধি গুণ

প্রতীকী ছবি।

পুষ্টিগুণের ভান্ডার বেল। দেশেই এটি ব্যাপক উৎপাদন হয়। দেশি ফল হওয়ায় দামও তুলনামূলক কম। গরমে তৃষ্ণায় ঠাণ্ডা এক গ্লাস বেলের শরবত নিমেষেই প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। শুধু কি তাই? নানা রোগের উপশম ঘটাতে বেলের জুড়ি নেই। বাংলাদেশ ও ভারতের পল্লী অঞ্চলে সর্বত্র বেল পাওয়া যায়। এর ইংরেজি নাম বেঙ্গল কুইন্স। বৈজ্ঞানিক নাম ঈগল মারমেলস।

বেলের রয়েছে বহু ঔষধি গুণ। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়াম। এছাড়া ভিটামিন এ, বি, সি, বিভিন্ন খনিজ এবং ফাইবারসহ প্রচুর পুষ্টিপদার্থ রয়েছে। এই ফল হজমের জন্য ভালো এবং কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্লতা, অনিয়মিত পেট সাফ জাতীয় পেটের সমস্যার ক্ষেত্রে উপকারী।

ভরপুর অ্য়ান্টি অক্সিড্যান্ট রয়েছে এতে। বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনেরও খনি। একাধিক খনিজ পাওয়া যায় বেলে। মিলবে পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেটও। ভারতের প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বেলের ওষধিগুণের কথা বারবার বলা হয়েছে। একাধিক রোগের চিকিৎসাতেও বেলের উপাদান প্রয়োগের কথা রয়েছে।

পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম আহার উপযোগী বেলে খাদ্যশক্তি আছে ৮৭ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৭৭ দশমিক ৫ গ্রাম, শর্করা ১৮ দশমিক ৮ গ্রাম, আমিষ ২ দশমিক ছয় গ্রাম, চর্বি শূন্য দশমিক ২ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৮ মিলিগ্রাম, লোহা শূন্য দশমিক ৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ শূন্য দশমিক শূন্য ৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ শূন্য দশমিক শূন্য ২ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৯ মিলিগ্রাম।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বেল বমি, রক্তবমি, অধিক রক্তক্ষরণ, বাচ্চাদের বিছানায় প্রসাব করা, ডায়াবেটিস, ব্রংকাইটস, অ্যাজমা, পানিবসন্ত ও মাড়ি প্রদাহের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বেল প্রস্টোজেন হরমোন লেভেল বাড়িয়ে নারীদের ইনফার্টিলিটির ঝুঁকি কমায়। তাছাড়া প্রসব-পরবর্তী ডিপ্রেশন কমাতেও খুবই কার্যকরী।

হোমিওপ্যাথিতে বেলের পাতা ও ফল থেকে দু'টি মূল্যবান ওষুধ তৈরি হয়। পাতা থেকে তৈরি ওষুধটির নাম ঈগল ফোলিয়া। ঈগল ফোলিয়া আন্ত্রিক সমস্যায়, বিশেষভাবে আমাশয়, পাইলস, কোষ্ঠবদ্ধতায় বেশ কার্যকর। বেলফল থেকে তৈরি ওষুধটির নাম ঈগল মারমেলস। আমাশয়, কোষ্ঠবদ্ধতা, ঠাণ্ডা প্রবণতা, কোমরে ব্যথা, স্বপ্নদোষ, চক্ষুপ্রদাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশ উপকারী।

প্রাচীন সময় থেকেই কিন্তু আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে পাকাপক্ত জায়গা করে করে নিয়েছিল বেল। তাই বেল খেয়ে থাকুন সুস্থ। চলুন জেনে নিই নিয়মিত বেল খাওয়ার উপকারিতা এবং এর মাধ্যমে যেসব রোগ এড়ানো যায়-

ডায়রিয়া নিরাময় : কাঁচা বেল ডায়েরিয়ার জন্য অব্যর্থ ওষুধ। যদি অনেক দিন ধরে আপনি এই সমস্যায় ভোগেন তাহলে বেল খান। কাঁচা বেল স্লাইস করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর তা গুঁড়া করে নিন। আর এই গুঁড়া ১ চামচ নিয়ে ব্রাউন সুগার আর গরম পানিতে মিশিয়ে খান। দিনে দুবার খেতে হবে এই মিশ্রণ। এক সপ্তাহ ডায়রিয়া নির্মূল হবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ : পাকা বেলে আছে মেথানল নামের একটি উপাদান, যা ব্লাড সুগার কমাতে কাজ করে। তবে ভালো ফল পেতে পাকা বেল শরবত করে নয়, এমনিই খেতে হবে।

কোষ্ঠকাঠিন্যে উপকারী : বেল মল পরিষ্কার হতে সাহায্য করে। নিয়মিত টানা ৩ মাস যদি আপনি বেলের শরবত খেতে পারেন, তাহলে আপনার মল আর কঠিন থাকবে না। কোষ্ঠকাঠিন্য আর হবে না। পাকা বেলের শাঁস বের করে চিনি আর পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে খান।

ঘামের দুর্গন্ধ নির্মূল : যাদের গায়ে ঘাম বেশি হয় এবং ঘামে খুব দুর্গন্ধ হয় তারা বেল পাতার রস পানিতে মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে শরীর মুছে নেবেন। কিছুক্ষণ পর গোসল করে নেবেন। এতে গন্ধ থাকবে না।

শুক্রাণু পাতলা হলে : যেসব পুরুষের শুক্রাণু বেশি পাতলা বা প্রসাবের রাস্তায় পিচ্ছিল আকারে ঝরে, তারা বেলগাছের ছালের টাটকা রস ২০ মিলিমিটার, গরুর দুধ ১৫০ মিলিমিটার, জিরার গুঁড়া ১ গ্রাম নিয়ে একসাথে মিশিয়ে দৈনিক একবার করে একমাস খেলে সমস্যা কমে যাবে। এছাড়া যাদের হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও পাকস্থলি দুর্বল তারা ৩০-৩৫ গ্রাম পাকা বেলের শাঁস শরবত করে সকাল ও বিকেলে দুবার খান, বেশ উপকার পাবেন।

পেপটিক আলসারের ওষুধ : পাকস্থলীর আলসার, পাইলস রোগে উপকারী। এটি শক্তিবর্ধক হিসেবেও কাজ করে। পাকা বেলের শাঁসে যে ফাইবার আছে তা আলসার উপশমে সাহায্য করে। সপ্তাহে তিন দিন বেলের শরবত করে খান, আলসার দূর হবে। এছাড়া বেলের পাতা সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেই পানি খেলেও আলসার উপশম হয়।

যক্ষ্মায় রক্ষা : পাকা বেলে আছে অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল উপাদান, যা যক্ষ্মা কমাতে সাহায্য করে। তবে ভালো ফল পেতে আপনাকে ব্রাউন সুগারের সঙ্গে বা মধু দিয়ে বেলের শরবত করে রাতে খেতে হবে, শুতে যাওয়ার আগে। এটি টানা ৪০ দিন খান। উপকার পাবেন।

ক্যান্সার প্রতিরোধক : বেলে আছে অ্যান্টি প্রলেফিরেটিভ ও অ্যান্টি মুটাজেন উপাদান। এই দুই উপাদান সহজে টিউমার হতে দেয় না। আর যেহেতু এই ফলে হাই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান আছে, তাই ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়।

লিভারের যত্ন : বেল বিটা ক্যারোটিনের সমৃদ্ধ উৎস। আর বিটা ক্যারোটিন হলো লিভার ভালো রাখার অন্যতম মূল চাবিকাঠি। বেলে আছে, থিয়ামিন ও রাইবোফ্লেভিন। এই দুই উপাদানই লিভারের শক্তি বাড়ায় খুব ভালোভাবে। এছাড়া রক্ত ভালো রাখে ও ম্যালেরিয়া জ্বর সারাতেও বেশ কার্যকরী বেল। পাশাপাশি বেল আপনার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

আমাশয় কমায় : অন্ত্রের কৃমিসহ অন্যান্য জীবাণু ধ্বংস করে ডায়রিয়া এবং আমাশয় রোগে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আমাশয় হলে কচি বেল টুকরো করে কেটে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত। সেই পানি পরের দিন ছেঁকে নিয়ে খান। দেখবেন এতে খুব ভালো ফল পাবেন।

ত্বক ভালো রাখে : ত্বককে সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে বেলের শাঁস এবং ত্বকের স্বাভাবিক রং বজায় রাখে।

আর্থ্রারাইটিস কমায় : ব্যথা ছাড়া এখন খুব কম মানুষই আছেন। নিয়মিত বেল খেলেই মুক্তি পাবেন আর্থ্রারাইটিস-এর সমস্যা থেকে।

কিডনি ভালো রাখে বেল : বেলের উপাদান কিডনি সুস্থ রাখে। কিডনির কার্যকারিতা ঠিকমতো চালাতে সাহায্য করে বেলের উপাদান।

বেলের শরবত যেভাবে বানাবেন বেল : ১টি মাঝারি আকারের দুধ : ১ কাপ (সর্বাধিক শীতল) চিনি/গুড় : স্বাদ অনুসারে কালো / গোলাপি লবণ : ১.৫ চা চামচ কাজু বাদাম : ৫-৬টা কিসমিস : ১ চা চামচ

প্রণালি পরিষ্কার পানিতে বেলটি ধুয়ে নিন। বাইরের শক্ত খোসাটি ছাড়িয়ে ফেলুন। একটি বড় বাটিতে চামচ চেঁছে বেলের মণ্ডটা তুলে নিন। বীজগুলো যতটা সম্ভব হাত দিয়ে সরিয়ে ফেলুন। বীজ পানীয়টিকে স্বাদে তেতো করে তোলে। এবার ওই মণ্ডের সঙ্গে কিছুটা পানি (আধ কাপের কম) যোগ করুন এবং ৫ মিনিট রেখে দিন। এতে মণ্ডটা নরম হয়ে যাবে। তবে যদি বেলটা পাকা ও যথেষ্ট নরম হয় তবে না রাখলেও চলবে। হাত দিয়ে মণ্ডটিকে ভালো করে মেশান। মনে রাখবেন, শরবত তৈরি করতে আপনার একমাত্র সরঞ্জাম হলো আপনার হাত। এবার মণ্ডে দুধ, গুড়/ চিনি এবং গোলাপি/ কালো লবণ যোগ করুন। এরপর ভালভাবে মিশিয়ে পরিবেশন করুন। সূত্র : ইন্টারনেট

এমএইচ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বেল,পুষ্টিগুণ,ঔষধি গুণ,ফল,দেশি ফল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close